সূত্র: দেশ রূপান্তর:
করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পাকিস্তানে অন্তত ৫৪ জন সাংবাদিক প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যম নিয়ে কাজ করা নিরপেক্ষ একটি সংগঠনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে আল জাজিরা জানিয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক কভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। তাতে দেশটিতে সাংবাদিকদের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে।
পাকিস্তানে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘ফ্রিডম নেটওয়ার্ক’ সোমবার জানিয়েছে, দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৫৪ জন সাংবাদিক। সংগঠনটির বলছে, সাংবাদিকদের জন্য সংবাদ প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন হয় মানা হচ্ছে না, আর না হয় এই নির্দেশনা আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
সাংবাদিকদের মধ্যে শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজের কুয়েতার শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের রিপোর্টার সালমান আশরাফ টেলিফোন আল-জাজিরাকে বলেন, “আমি অফিসে ছিলাম। আমার শরীরে জ্বর জ্বর বোধ হচ্ছিল। মাথা ঝিমঝিম করছিল।”
“আমি আমার শিফট শেষ করার আগেই অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে আসি।…খুব খারাপ লাগছিল। আমার তীব্র জ্বর ওঠে, শরীর জুড়ে অনেক ব্যথা ছিল। এমনকি আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না।”
জিও নিউজের কুয়েতা ব্যুরোতে আশরাফসহ আরও ছয়জন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। যেসব হাউসে সাংবাদিক, টেকনিক্যাল স্টাফ ও অন্যান্য সহযোগিতার গাদাগাদি করে কাজ করেন সেসব হাউসগুলোতেও একই অবস্থা বলে জানা যায়।
দ্য ডন অনলাইনের তথ্য, পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৯১ জনের।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কমে না আসলেও দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে এরই মধ্যে লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নতুন নির্দেশনা অনুাযায়ী সপ্তাহে পাঁচদিন মার্কেটগুলো ও অনেক শিল্প খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চলবে সূর্যোদয় থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গাইডলাইন বেধে দেওয়া হলেও তা মানার প্রবণতা খুব কম। নানা কারণে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মানা যাচ্ছে না।
কুয়েতার একজন সাংবাদিক বলেন, “আমরা আগের মতোই মাঠে যাই। মাঠে ও অফিসে আগের মতোই কাজ করি। আগের মতোই জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে হচ্ছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গাইডলাইন মানায় তেমন নজর নেই সাংবাদিকদের।
পাকিস্তানে ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল আছে ৩০টির বেশি। আছে কয়েক ডজন জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র।
কুয়েতার ওই সাংবাদিক বলেন, “আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত যে, আমি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে যাচ্ছি। এটা থেকে আমাকে বাঁচাতে হবে এমনটাও মনে হয় না আমার।”