(Research based article)
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশও লকডাউন প্রন্থা অবলম্বন করেছে। এখন কথা হচ্ছে, আসলেই কি এই প্রন্থায় করোনা মোকাবেলা সম্ভব?? সেটা জানার জন্য চলুন ঢু মেরে আসি চীনে। একটা অঞ্চলকে লকডাউন করে করোনা মোকাবেলায় সফলতা পায় তারা। যদিও কেউ কেউ বলছেন তারা ভেকসিন আবিষ্কার করে নিয়েছেন আমার কাছে সেসব নেহাতই কান কথা। চীন থেকে ঝাপ দিয়ে যাই এবার দক্ষিণ কোরিয়ায়। চীনের থেকে করোনা মহামারী যখন সারা বিশ্বকে কাবু করতে বেরিয়ে পরলো তখন ই তার শিকার হলো দক্ষিন কোরিয়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিলো দক্ষিন কোরিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ঠিক তখন দ্রুত করোনা টেস্ট কার্যক্রম শুরু করে তারা। বিনামূল্যে এই করোনা টেস্ট কার্যক্রম শুরু করার পাশাপাশি আক্রান্তদের জরুরী সেবা প্রদানে নজর দেয় দেশটি। আর করোনা মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার এসব উদ্যোগ এই ভাইরাস মোকাবেলায় সফল করে তাদের। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই করোনা পরিস্থিতিতে যখন হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব , দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নির্বাচন টাও সেরে নেয় এই সুযোগে। কিন্তু সমস্যা হয় যখন সারাবিশ্ব চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পথে চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে! আর কেউ সেভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে পারেনি বললে ভুল হবেনা। ঠিক তখনই সুইডেন বাবাজি উলটো পথে হেঁটে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। কোনো প্রকার লকডাউন প্রন্থায় না গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দিন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। বৃদ্ধ, হার্টের রোগী, শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগী ইত্যাদি লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে দিব্বি করোনা মোকাবেলায় সম্মুখ যুদ্ধে যায় সুইডিশরা। আর সেই যুদ্ধে যে তারা বিজয়ী হয়েছে সেটা বললেও মিথ্যে হবেনা। কি ছিলো এই সুইডিশ আঁতেলদের গোপন অস্ত্র??
তাদের অস্ত্র ছিলো হার্ড ইমিউনিটি তত্ত্ব!
শব্দটার মানে উদ্ধার করতে গিয়ে আমার মতো অনেকের চুল পরে যেতে পারে।
“হার্ড ইমিউনিটি- অর্থাৎ কিছু লোক মারা যাবে, এবং অনেক মানুষ ইমিউন (প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাস প্রতিরোধী) হয়ে যাবে।”
করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলে সমালোচিত হয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বেচারা নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে হার্ড ইমিউনিটি যে তেমন একটা বিকল্প নেই সেটা অযৌক্তিক কিছু নয়। এই ইমিউনিটি গড়ে উঠতে পারে দুই ভাবে , ভেকসিনের মাধ্যমে কিংবা আক্রান্তের মাধ্যমে।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কোনো টিকা বা ভেকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। ধরলাম তা আবিষ্কার হয়ে গেলো তারপর সেটা বাজারজাত করতে এক থেকে দেড় বছর কিংবা তারও বেশী সময় লাগতে পারে। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সকলের কাছে পৌঁছাতে সময়টা দিগুন হতে পারে বললেও আমি তর্কে যাবোনা। তাহলে এতো সময় পর্যন্ত কি একটা দেশ লকডাউন আর টেস্টের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে লড়বে?? অন্য দেশ হলে আমি বিবেচনা করে দেখতাম তবে বাংলাদেশের জন্য সেই সম্ভাবনা ০.০০% । তাহলে উপায়?? আমার মতে হার্ড ইমিউনিটি একটা উপায় হতে পারে। এমনটা মনে হওয়ার কারন এই নয় যে আমি বরিস সাহেবের ফ্যান, এর কারণ হলো আমাদের দেশে অধিকাংশ রোগী কোনো প্রকার উপসর্গ ছাড়াই আক্রান্ত হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে তাদের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে এই হার্ড ইমিউনিটিকে আরও প্রসারিত হতে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
দেশের মোটামুটি ৬০-৭০ শতাংশ জনতার যদি এই ইমিউনিটি গড়ে ওঠে, তবেই থেমে যাবে ভাইরাসের শক্তি। এটাই সংক্রমণের অন্তর্নিহিত বিজ্ঞান। যে কোন মহামারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই কথা। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনসনের হিসেব বলছে এই সংক্রমণটা অবশ্য ৮৫ শতাংশেরও হতে পারে হার্ড ইম্যুনিটি গড়ে ওঠার আগে। এই তত্ত্ব অনুসারে, যদি একটা দেশের ৭০-৮০ শতাংশ লোকের অসুখটা হবার সম্ভাবনা না থাকে, তবে বাকি ২০-৩০ শতাংশ মানুষ অনেকটা সুরক্ষিত থাকবে, তাদের অন্যদের থেকে সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা কমে যাবে। ধরে নেয়া হয়েছে কোভিড -১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে থেকে যাবে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা।
যাওয়ার আগে একবার সুইডেনে আরেকবার ঘুরে আসি! মার্চের শেষে এবং এপ্রিলের গোড়ায় করা সমীক্ষা অনুসারে রাজধানী স্টকহোমের আড়াই শতাংশ মানুষ নাকি সে সময়েই আক্রান্ত হয়েছে করোনাতে, যাদের অনেকেই ছিল উপসর্গ-হীন। আর এখন বলা হচ্ছে স্টকহোমের ২০ শতাংশ মানুষ নাকি ইতিমধ্যেই করোনার ইমিউনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। স্টকহোমে থাকেন সে দেশের এক-চতুর্থাংশ লোক। এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্টকহোম নাকি অর্জন করে ফেলবে “হার্ড ইমিউনিটি”, যে হার্ড ইমিউনিটি এসে গেলে মহামারীর ভয় থাকবে না আর।
সোর্সঃ Theatlantic, USA Today, CDC, CNN, Sciencemag, Indiatimes, Indian Express,