মাহমুদ ফারুক, ১৩ মে: সারারাত ভরে আপনাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছি। কি যে চিন্তা করছি কিভাবে কাটবো এ ধান।
আপনারা দয়া করে কেটে দিয়েছেন। আল্লাহ আপনাদের ভালো করুন। বলছিলেন এক দরিদ্র কৃষকের স্ত্রী।
মোস্তান বাড়ির কৃষক মোঃ বিল্লাল। জমিতে পাকা ধান। ধান কাটার সময় থেকে হটাৎ করেই জ্বরে পতিত হলেন।
চিন্তায় ছিলেন কিভাবে কাটবেন পাকা ধান।
খবর পেয়ে ছুটে যান আল হেরা যুব সংঘ নয়নপুর এর সদস্যরা। প্রায় ৪০ শতক জমির ধান কেটে দেয়। একদিকে ধান কাটা চলছে অন্যদিকে হতদরিদ্র অসুস্থ্য কৃষকের চিন্তাও বাড়ছে। এতজমির ধান কাটার পর ভাবছেন হয়তো টাকা চাইবে যুবকেরা।
এ জন্য কিছু টাকা রেখেছেন নিজের কাছে। কখন না আবার চেয়ে বসে। কিন্তু হাসিমুখে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সদস্যদের জন্য দোয়া করতে বললেন সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা মুনীর হোসাইন।
সামাজিক কাজ, বেকারত্ব দূরীকরণ, যুব সমাজকে মাদক থেকে দুরে রাখার প্রত্যয়ে গঠিত হয়েছে নয়নপুর আল হেরা যুব সংঘ।
উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের ছেলে ও কলেজে অধ্যায়নরত শরফুদ্দিন আহমদকে সভাপতি-রাহাত হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক ও যোবায়ের হোসাইনকে কোষাধ্যক্ষ মনোনিত করে শুরু করে এ সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয় স্থানীয় বাংলাবাজার জামে মসজিদের ইমাম মুনীর হোসাইনকে।
প্রাথমিক ভাবে পাঁচশত সদস্য করার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করে মাত্র এক মাসেই প্রায় তিনশত সদস্য ফরম পূরন করে তাদের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করেছেন ।
এদের মধ্যে থেকে প্রায় ৫০ জন সদস্য করোনার দূর্যোগের সময় দরিদ্র কৃষকের পাকা ধান কাটা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ১৬ জন কৃষকের প্রায় ৮০০ শতক জমির ধান কেটে দেন।
১ লা মে শ্রমিক দিবস থেকে শুরু করে ১২ ই মে পর্যন্ত প্রতিদিন ই ১৫ থেকে ২৫ জন করে স্বেচ্ছায় এ কাজ করেন। নয়নপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মাসুদ হাওলাদার, বাবুল আদির, আবুল খায়ের, মোকসুদ উল্যাহ, আনোয়ার, মোঃ হোসেন, মমিন, হানিফ, নুর মিয়া গাজী, বাবুল গাজী, সিরাজ বেপারী, রশিদ বেপারী, ও কামালসহ আরো অনেকের প্রায় ৮০০শতক ( ৮ একর) জমির পাকা ধান কেটে দেন আল হেরা ‘র সদস্যরা।
ঢাকা তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রসায়ন বিভাগের মাষ্টার্সের ছাত্র ইমরান প্রায় প্রতিদিন ই ধান কাটার কাজে অংশ নেন এবং এ যুব সংঘকে আরো সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দৌলতগাজী বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আল আমিন ও এ যুবকদের সাথে কাজে অংশ নেন এবং উন্নতি কামনা করেন।
কুমিল্লা ইয়াম্মী চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজারিয়াল কর্মকর্তা জামাল হোসেন খুবই খুশি হয়ে এ কাজে অংশ নেন। এবং সংস্থার সদস্যদের গেলে ফ্রি চাইনিজ খাওয়ানোসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ধান কাটার নামে ফটোসেশনে কৃষকের ধান মাড়িয়ে নষ্ট করা অথবা কাঁচা ধান কাটা এগুলো দেখে মানুষ যখন হাসাহাসি করছিল ঠিক তখনি আল হেরা ‘র যুব সদস্যদের ধান কাটা কর্মসূচি সত্যিই খুব আলোড়ন তুলছে আমাদের গ্রামে বলেছেন স্কলার্স স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মোঃ রফিক উল্যাহ। তিনি নিজেও এ কাজে প্রতিদিন অংশ নেন।
এছাড়াও দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই ফোন করে কাজের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও সহযোগিতার কথা বলেন তিনি।
করোনা ভাইরাসের এ সময়ে দরিদ্র গ্রামবাসির মাঝে অল্প পরিসরে প্রায় ২০ জন সদস্যের মাঝে ১০কেজি চাল ১কেজি ছোলা ১ কেজি মশুর ডাল ২কেজি আলু ও খেজুরসহ প্রায় ১৫কেজি করে ত্রাণ প্রদান করে আল হেরা যুব সংঘ।
ভবিষ্যতে নিয়মিত সামাজিক কাজের পরিকল্পনা আছে বলে জানান সংস্থার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সবার দোয়া কামনা করেন।