নিজস্ব প্রতিবেদক, ২৬মে: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সরকারি খাল দখল করে নির্মাণ করা ছয়টি দোকানঘর উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার ও ঈদের দিন সোমবার উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এ অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেন।
এর আগে রোববার রাতসহ বিভিন্ন সময়ে উপজেলার চরফলকন বোয়ালিয়া এলাকায় স্থানীয় তিন ব্যক্তি খালটি দখল করে ওই দোকানঘরগুলো নির্মাণ করেন। এ সময় অবৈধ দখলকারীদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার দ্বীন ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে বোয়ালিয়া খাল দখল করে হাজিরহাট-পাটারীরহাট সড়কের পূর্বপাশে দু’টি দোকানঘর নির্মাণ করেন। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় নুর আলম মাঝী ও বাবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দোকানের পাশের আরও ৭৫ ফুট জায়গা দখলের পায়তারা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা খালের পাড়ের জমি থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারি পাঁচটি রেইন-ট্রি গাছ কেটে ফেলেন।
সর্বশেষ ঈদের আগের দিন রোববার রাতে মূল্যবান আরও তিনটি রেইন-ট্রি কেটে জায়গাগুলো দখল করে চারটি দোকানঘর নির্মাণ করেন। পাশপাশি নির্মাণ করা দোকানের ভিটির জায়গা ভরাট কারর জন্য বালুভর্তি বস্তা এনে পাশে স্তূপ করে রাখেন।
খবর পেয়ে ঈদের দিন সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবারক হোসেন অভিযান পরিচালনা করে নতুন নির্মিত চারটি দোকানঘর উচ্ছেদ করে মালামাল জব্দ করে নিয়ে যান। পরদিন মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে খাল দখল করে নির্মাণ করা অপর দু’টি দোকানও উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় দখলকারী দ্বীন ইসলামকে আটক করা হলেও অপর দখলকারীরা গা ঢাকা দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটি দিয়ে পাটারীরহাট ও চরফলকন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছে। পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি খালটি পুনঃখননও করা হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে সেই খাল ভরাট করে এ দোকানঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিলো। এ সময় তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খাল দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবারক হোসেন, স্থানীয় পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু, সার্ভেয়ার প্রমেশ্বর চাকমা ও তহসীলদার ফজলুল কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
সার্ভেয়ার প্রমেশ্বর চাকমা জানান, খালসহ সড়কের পাশের জমি সরকারের এক নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। ওই জমি থেকেই গাছ কেটে এবং খাল দখল করে দোকানঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিলো। যে কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, খাল দখলের খবর পেয়ে ঈদের দিন দুপুরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে আমরা দোকানগুলো উচ্ছেদ করে দেই। পাশাপাশি মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে খাল দখল আগের নির্মাণ করা দোকানগুলোও উচ্ছেদ করা হয়।
সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি গাছ কেটে নেওয়া ও খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণের ঘটনায় আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।