নিজস্ব প্রতিবেদক, ২ মে:
জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গে গত দুইমাসে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিহত এসব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ৫ জনের দেহে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। অন্যদের ফলাফল আসে নেগেটিভ।
১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আর এসব মৃত ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় দাফনের কাজে এগিয়ে এসেছেন জেলার কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
১ জুন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ হাজার ১শ ৪২জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রেজাল্ট পাওয়া গেছে ২ হাজার ৮শ ৬৬টি। এখনো ২৭৬টি নমুনার রেজাল্ট পাওয়া যায়নি।
তবে এর মধ্যে ২জুন পর্যন্ত পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক ও নার্সসহ আক্রান্ত হয়েছেন ২৪২জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১১০জন, রামগঞ্জে ৪৮, রায়পুর-৪৪,কমলনগর-২১ ও রামগতি-১৯জন। ইতিমধ্যে জেলায় ৯০জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এ দিকে করোনা উপসর্গে জেলার কমলনগর উপজেলায় মারা গেছেন ১০জন, সদরে ১২জন, রামগতিতে ৭জন, রায়পুর উপজেলায় ৫জন ও রামগঞ্জ উপজেলায় ৬জন। এদের মধ্যে ১৫ জন জেলার বাহির থেকে লক্ষ্মীপুরের এসেছিলেন। একজন প্রবাসী এবং অপর একজন প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন। একদিনে মারা গেছেন ৫ ব্যক্তি। উক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর ও স্বাস্থ্য বিভাগ মৃত ব্যক্তিদেরসহ কয়েকটি বাড়ী লকডাউন করে।
জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকার একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। রামগঞ্জ উপজেলায় ১২ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৩ এপ্রিল জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন। প্রথম দিকে লকডাউন কিছুটা মানা হলেও পরে তা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। প্রতিটি হাট-বাজারে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
কিন্তু প্রশাসনের দিক থেকে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তা কোন কাজেই আসেনি। এ দিকে সাধারন ছুটি শেষে চলছে অফিস আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও গন পরিবহন। এর মধ্যে নতুন করে আবারো বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক সুরক্ষা মেনে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও গনপরিবহন চলাচলের নির্দেশ থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই তা মানছেনা। ফলে করোনার ঝুকি বাড়ছে কয়েকগুন।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি সামাজিক সুরক্ষা মেনে চলে, তাহলে কিছুটা হলেও করোনা সংক্রমন প্রতিরোধ করা সম্ভব। সামাজিক সুরক্ষা না মানলে কোনভাবে করোনার প্রার্দুভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সবাইকে সামাজিক সুরক্ষা, মাস্ক ও গ্লাভস পরে বাসা থেকে বের হতে হবে এবং ২০ সেকেন্ড সময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। পাশাপাশি ভিটাসিন সি যুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফ্ফার জানান, ২ জুন পর্যন্ত জেলায় ২৪২জন আক্রান্ত হন। ৯০জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আতংকিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা ভাইরাাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি।
