বছরের শুরুতে আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম। নতুন বছর আসলে যা হয় আরকি। কতজনের কত লক্ষ্য ছিলো। কিন্তু সেসব আর হলোনা। করোনাকাল সেই সব কিছু ভেঙে দিলো। আমরা মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়লাম। এইযে আমাদের লক্ষ্য, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা গুলো নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো এবং আমরা গৃহবন্দী হয়ে পড়লাম এতে করে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হলো। আর যা আমাদের অজান্তেই হলো। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে WHO এর প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসাস, মানুষ জনের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই মহামারির প্রভাব ইতিমধ্যে খুবই উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ একইসঙ্গে এমন মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে সরকারগুলো এ সংকটের বিষয়টি আমলে না নিলে আরো বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মী ও শিশুরা এই মানসিক চাপের ‘ব্যাপক বিস্তার’ ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
তাছাড়াও অসংখ্য মানুষ চাকুরীহারা হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাসায় ভুগছেন। আর শিশু কিশোরদের জন্যও এই পরিসংখ্যান কম নয়। শিশুদের রোজকার জীবনের ছন্দপতনের ফলে শতকরা ৯১% শিশু মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে। তরুণরা চাকুরী হারিয়ে মানসিক চাপে আছে আবার কেউ কেউ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন এবং হতাশায় আছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী একই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। যুক্তরাজ্যে আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৩২ শতাংশ তরুণ-তরুণীর মানসিক স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
গবেষণায় করোনা ছাড়াও সার্স মহামারির সময়ের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, ২০০০ সালে সার্স মহামারির সময়ে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল। আর করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের শত শত কোটি মানুষ ঘর-বন্দি হয়ে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় এসময় মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বেশি বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলার মতো মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায়ও অবশ্যই জোর দেওয়ার গুরুত্বারোপ করেছেন আধানম, জাতিসংঘের সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতায় এটা মোকাবিলা হবে সরকারগুলো এবং সুশীল সমাজের যৌথ দায়িত্ব। মানুষের মনোগত ব্যাপারটা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে ব্যর্থ হলে এটা সমাজে দীর্ঘ সময়ের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হবে।