নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরে ভোলাকোট ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও চেয়ারম্যানের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে স্থানীয় এলাকাবাসী। শনিবার ও রবিবার সকালে ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের গেইটে তালা দিয়ে কে আই ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা মাঠে ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসুচি পালন করে নারী-পুরুষসহ সহশ্রাধীক মানুষ। মানববন্ধন শেষে নাগমুদ বাজারের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানে বিক্ষোভ করে তারা।
এসময় বক্তব্যে রাখেন, রামগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মহসিন মাল, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিন্টু মিয়া, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ইলিয়াছ হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়েজ বাবু, সাবেক সভাপতি এস এম রাশেদ ও সাবেক সাধারন সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রমূখ।
এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান মানিক তার বাসার গৃহকর্মীকে ধর্ষন করে বলেও অভিযোগ এনে দ্রুত তাকে গ্রেপ্তারের দাবী জানানো হয় এ কর্মসুচি থেকে। অন্যাথায় আরো কঠোর কর্মসুচির হুশিয়ারী দেন বক্তারা।
সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে তার বাসার গৃহকর্মীকে ধর্ষন করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ওই গৃহকর্মী লক্ষ্মীপুর আদালতে চেয়ারম্যানকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়াও এ ইউনিয়নে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের ১২জন সদস্যের মধ্যে ১০জন।
অপরদিকে ধর্ষনের অভিযোগে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ধর্ষিত নারী। গত বুধবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের এ মামলা দায়ের করা হয়। পরে বিজ্ঞ বিচারক বাদীর জবানবন্দি শুনে মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়। অপরদিকে একই দিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামগঞ্জ) আমলী আদালতে মো. বেলায়েত হোসেন রিপন বাদী হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। পরে বিচারক এ মামলাটি গ্রহন করে ডিবির ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
চেয়ারম্যানের হাতে নির্যাতিত ওই গৃহ পরিচালিকা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের বাসায় তার মা ঝিয়ের কাজ করতেন। হঠাৎ তার মা অসুস্থ হলে তাদের বাসায় গৃহপরিচালিকার কাজ করতে যায় সে।
চলতি বছরের ২২ মার্চ বিকেলে চেয়ারম্যান জোরপূর্বক বাসার দোতালায় নিয়ে ধারালো অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ধর্ষন করে। এসময় ধর্ষনের ভিডিও চেয়ারম্যান তার মোবাইল ফোনে ধারন করে। পরে কাউকে ঘটনাটি বললে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষন করে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত ঐ নারী।
অপর মামলার বাদী মো. বেলায়েত হোসেন রিপন জানান, চেয়ারম্যান বশির আহমদের নিকট বাকীতে বিভিন্ন সময় মালামাল বিক্রি করতেন। দোকানের পাওনা টাকা চাইলে তাদের ওপর হামলা চালায় চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এসময় দোকানের টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন তিনি।
উভয় মামলার বাদীর আইনজীবি মো. শাহ আলম জানান, কাজের মেয়েকে ধর্ষনের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটির বাদীর জবানবন্দি শুনে আদেশের জন্য রাখেন। চেয়ারম্যানের বাসায় দীর্ঘদিন মা ও মেয়ে কাজ করতেন। এ সুবাধে কাজের মেয়েকে একাধিকবার ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষন করে বলে জানান মামলার আইনজীবি এডভোকেট শাহ আলম। অপরদিকে অর্থ আতœসাৎ, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে অন্য আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযুক্ত ভোলাকোট ইউপি চেয়ারম্যান মো. বশির আহমদের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল হলেও তিনি তা রিসিভ করেনি। তবে এসময় তার কয়েকজন অনুসারী জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা একটি প্রভাবশালি মহল দ্বারা হয়েছে। চেয়ারম্যানকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই মূলত ধর্ষনের ঘটনাটি সাজানো হয়েছে।
এছাড়া উক্ত চেয়ারম্যানের ইয়াবা সেবন ও এক নারীর সাথে অসামাজিক কার্যকলাপের কথোপকতনের একটি অডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।