ইউরোপ মহাদেশের এক দেশ হল ফ্রান্স। এই দেশে অনেক বিখ্যাত মানুষের জন্ম হয়েছিল।
তাঁদের মধ্যে একজনের কথা আজ আমি আপনাদের সামনে বলবো। তিনি হলেন বিখ্যাত ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৭৬৯ সালের ১৫ ই আগস্ট।
তিনি জন্মেছিলেন ফ্রান্সের করসিকার এজাক্সিউ শহরে। তাঁর পরিবার মূলত লুনিজিয়ানায় বসতি স্থাপনকারী লোম্বার্ড বংশোদ্ভূত তুসকান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। যারা ইতালির একটি অভিজাত সম্প্রদায় হিসাবে বিবেচিত হতেন।
তাঁর বাবার নাম ছিল কার্লো বোনাপার্ট আর মায়ের নাম ছিল লেটিজিয়া রামোলিনো। তাঁর বড়ভাইয়ের নাম ছিল জোসেফ বোনেপার্ট।
তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর অন্যান্য অনুজদের নাম ছিল লুসিয়েন বোনাপার্ট, এলিসা বোনাপার্ট, লুই বোনাপার্ট, পউলিন বোনাপার্ট,
ক্যারোলিন বোনাপার্ট এবং জেরোমি বোনাপার্ট।
১৭৮৬ সালে, ডিগ্রী লাভ করে নেপোলিয়ন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে ভূষিত হয়েছিলেন।
তখন তাঁর বয়স ছিল কত জানেন? মাত্র সতেরো বছর। ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের আগে অবধি, তিনি ভ্যালেন্স ও এক্সনে সেনারক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরের অধিকাংশ বছর, তিনি করসিকাতে অতিবাহিত করেছিলেন। তখন সেখানে, রাজবংশীয় বিদ্রোহী সাধারণ কর্সিকানদের মধ্যে, ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চলছিল।
নেপোলিয়ন জ্যাকোবিনের ফ্যাকশনকে করেছিলেন সমর্থন। তাঁর নেতৃত্বে ফরাসি সেনাবাহিনী এক দশকের বেশি সময় ধরে,
সব ইউরোপীয় শক্তির সাথে , যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। তিনি ইউরোপের অধিকাংশ জায়গা তাঁর আয়ত্তে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীকে এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীতে করেছিলেন রূপান্তর। তিনি ছিলেন প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্খী এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর লক্ষ্যপূরণে সবসময় থাকতেন অবিচল।
তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তাঁর বীরত্বের নেই কোন তুলনা। তিনি পারতেন অসম্ভবকে করতে সম্ভব। তিনি ছিলেন একজন ফরাসী সম্রাট। তাঁর ফরাসী সম্রাট হিসাবে কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১৮০৪ সালের ১৮ ই মে থেকে ১১ই এপ্রিল, ১৮১৪ এবং ২০শে মার্চ, ১৮১৫ থেকে ২২ শে জুন, ১৮১৫ অবধি। ফরাসী সম্রাট হিসাবে তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়েছিল ১৮০৪ সালের ২ ডিসেম্বর।
তিনি ছিলেন ইতালির সম্রাট ও। ইতালির সম্রাট হিসাবে তাঁর শাসনকালের মেয়াদ ছিল ১৭ ই মার্চ, ১৮০৫ সাল থেকে ১১ ই এপ্রিল ১৮১৪ সাল পর্যন্ত। ইতালির সম্রাট হিসাবে হয়েছিল তাঁর রাজ্যাভিষেক ১৮০৫ সালের ২৬ শে মে। তিনি ছিলেন সুইস কনফেডারেশনের মধ্যস্থতাকারী।
তিনি রক্ষক ছিলেন কনফেডারেশন অফ রাইনের।
নেপোলিয়ন ছিলেন ফরাসি প্রজাতন্ত্রের এক কনসাল। ১৭৯৮ সালের মার্চ মাসে, নেপোলিয়ন মিশর দখল করার জন্য করেছিলেন সামরিক অভিযানের এক প্রস্তাব। তখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ কখন আক্রমণ করতে হবে সেটা সম্পর্কে তাঁর অবিশ্বাস্য রকম কল্পনা শক্তি ছিল৷ তিনি প্রায়সময় গোপন খবর রাখতেন শত্রুপক্ষের। সেই অনুযায়ী তিনি গ্রহণ করতেন পদক্ষেপ।
সারা জীবন ধরে, নেপোলিয়ন অনেক যুদ্ধ করেছিলেন। এইসব যুদ্ধের মধ্যে, কিছু কিছু যুদ্ধে তিনি খুব সফলতার সাথে বিজয় অর্জন করেছিলেন। আবার অনেক যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়ে
তাঁর কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন। তিনি যখন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ দখল করেছিলেন, তখন ইউরোপের সমস্ত দেশ তাঁর ওপর যায় রেগে।
তারা বাক্রুদ্ধ হয়ে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে।
তারা সবাই একসাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ফ্রান্স তথা নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে। নেপোলিয়ন পড়ে গেলেন বিপদে। তখন এত বিরাট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সামর্থ্য তাঁর ছিল না।
কারণ, এর কিছুদিন আগেই, তিনি যখন রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন, তখন ভয়াবহ শীতে আক্রান্ত হয়ে, তাঁর অধিকাংশ সেনা মারা গিয়েছিল।
১৮১৫ সালের ১৮ ই জুন, এক ঐতিহাসিক যুদ্ধে, যার নাম ছিল ওয়াটারলুর যুদ্ধ, তাতে নেপোলিয়নকে দুটি সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছিল। ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীন ব্রিটিশ বাহিনী ও গাবার্ড ভন বুচারের অধীন পার্শিয়ান সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হন নেপোলিয়ন। এই পরাজয় তাঁর জীবনে ডেকে আনে বিপর্যয়।
ওয়াটারলুর যুদ্ধে, নেপোলিয়ন পরাজিত হবার পরে, বিজয়ী শক্তিবর্গ, তাঁকে আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে দিয়েছিল নির্বাসন। সেখানে অত্যন্ত অনাদরে, ১৮২১ সালের ৫ই মে, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মৃত্যু হয়েছিল। নেপোলিয়নের বীরত্বের জন্য, আজো শুধু ফ্রান্সে নয়, সারা পৃথিবীতে তিনি খুবই জনপ্রিয় এক ব্যক্তিত্ব।
তথ্য সংগ্রহে:
শিবব্রত গুহ
৩/এ, কে.পি.রায়.লেন,
পোস্ট অফিস – হালতু,
থানা – গড়ফা,
কোলকাতা – ৭০০ ০৭৮,