মাহমুদ ফারুক/ মোস্তফা কামাল, ৬ আগষ্ট:
প্রচন্ড জোয়ার ও সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর এবং রায়পুর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী অন্তত ৪০ কিমি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসময় বহু এলাকা প্রায় ৫-৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ারে তিনটি উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাঁট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাছের ঘেরের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। হাজার হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় দিন যাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুর ১২টা থেকে নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিকাল ৪টা নাগাদ জলোচ্ছাসের মতো হু হু করে পানি ডুকে তলিয়ে যায় নদীর তীরবর্তি এলাকাগুলো। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় ৪টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি আটকে থাকার কারণে বেড়িবাঁধের বাহিরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গত ৩ দিনের মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে মওসুমী ফসলের। এছাড়াও গত তিনদিন যাবত লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মতিরহাঁট এলাকার ৫০টির অধিক গ্রাম এখনো রয়েছে পানির নীচে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার রায়পুর উপজেলার তোরাবগঞ্জ এলাকার আলতাফ মাষ্টার ঘাঁট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে চর আবাবিল, চরভৈরবী, হাজীমারা, চর কাচিয়া, জালিয়ার চর, কুচিয়ামোড়া, চরলক্ষ্মী, চরবংশী, চর ঘাশিয়া, টুনুর চরসহ ১২টি গ্রাম। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন গৃহপালিত পশু ও বৃদ্ধ এবং শিশুরা।
রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার, চর বাদাম, কমলনগরের চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেঞ্জ, ফলকন, পাটোয়ারীর হাট, সদরের চর শামছুদ্দিন ও চর রমনী, চর মোহনাসহ অন্তত ৫০টি গ্রামে এমন পরিস্থিতির শিকার হন নদী তীরবর্তী প্রায় ৫০ হাজার বসিন্দা
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে অস্বাভাবিক জোয়ারে কারণে নিন্মাঞ্চল এলাকার সংযুক্ত খাল, বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু পরিমান, কোথাও কোমর পরিমান পানিতে ডুবে আছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামগুলোর পুকুর, মাছের ঘেরের কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এসব এলাকার বেশীরভাগ অঞ্চল জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঐ অঞ্চলের অন্তত ৩ হাজার পানের বরজ কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় ঐ অঞ্চলের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
রায়পুর উপজেলার আলতাফ মাষ্টার মাছ ঘাঁট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, গত ২০ বছরেও নদীর এমন ভয়ঙ্কও রূপ আমরা দেখিনি। হটাৎ করে প্রায় ৮/১০ফুট উচ্ছতায় জলোচ্ছাস হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়। চারদিকে কান্নাকাটি। আজ (বৃহস্পতিবার) আবার দুপুরের পর বুঝতে পারছি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলো থেকে পানি নামেনি। নতুন করে আবারও জলোচ্ছাস হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে বলেও তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জোয়ারে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন, কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী। এসময় তিনি ইউপি সদস্যদের জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্লাহ জানান, কয়েক বছরের মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বেড়িবাধ মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই জোয়ারে ওই সব গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এ সময় এলাকায় চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়, মাছের ঘের ডুবে গিয়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তবে জোয়ারের পানিতে কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি জেলা ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে বেশ কিছু কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ও সড়কের গাছসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি বর্তমানে (আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে) ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে রয়েছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণের কাজ চলছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা ঘাটও ভেঙ্গে গেছে আমরা গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিবেচনায় দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করছি, ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ক্যামেরায়: ইয়াছিন আরাফাত রাব্বী।