মাহমুদ ফারুক, ১১ সেপ্টেম্বর:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনা নদী এবং দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ। সন্ধার পর থেকে জেলার প্রতিটি হাঁটে চলছে ইলিশের মেলা। দুর দুরান্ত আসা ক্রেতাদের ভীড়ে গভীর রাত অবধি চলে ইলিশ মাছ কেনাকাট। জেলার বাহিরের বিভিন্ন জেলা উপজেলা এমনকি ঢাকা চট্টগ্রাম থেকেও প্রাইভেটকারযোগে মৌসুমী ও সৌখিন মৎসপ্রেমীরা আসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন ঘাঁট থেকে মাছ ক্রয় করতে। তাজা ও রূপালী ইলিশের দামও কম থাকায় ক্রেতারা খুশি।
রামগতি ও কমলনগরের মাছ ঘাট এবং বাজারগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ইলিশের বেচাকেনা এখন সরগরম।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ৫শ গ্রাম ওজনের ইলিশ খুচরা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকা, ৮শ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫ থেকে ৭শ টাকা, ১ কেজি ওজনের বেশি ইলিশ কেজি প্রতি দাম ৮শ থেকে হাজার টাকার মধ্যে।
আলেকজান্ডার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিক মাঝি জানান, গত কয়েকদিন ধরে ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। তাই দামও কম।
রামগতি বাজারের জেলে খাজাম্মাদ মাঝি জানান, মাছের সরবরাহ এখন বেশি। ক্রেতারাও কিনছেন বেশি। বেশি বিক্রি হওয়ায় দামও অনেকটা কম।
চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে আসা গোলাম রহমান রিফাত জানান, বাড়ীতে দুইদিনের জন্য এসেছি। রামগতির মতিরহাঁটের মাছ মোটামুটি কমদাম। এখান থেকে মন দেড়েক (৬০) কেজি ইলিশ মাছ কেনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এত ইলিশ দিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওখানে বোন ও নিকটাত্মীয়রা রয়েছেন। সবাইকে দেয়ার পর বাকীগুলো নিজেদের জন্য।
এসময় কয়েকজন ক্রেতা জানান মেঘনার ইলিশের স্বাদ একটু বেশি। এছাড়া তাজাও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে এখন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দামও কিছুটা কম।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলে খলিল, নুরুল হক, আলাউদ্দিন মাঝি জানান, কয়েকদিন পরই অভিযান শুরু হবে। শেষ সময়ে সাগরে ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। তবে মাছের বাজার নিয়ে সন্তুষ্ট তারা।
রামগতি বাজার, টাংকিরঘাট, আলেকজান্ডার মাছ ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলে ও ইলিশ মাছের মহা উৎসব। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টাই ব্যস্ত সব ঘাটের ব্যবসায়ী ও জেলেরা । কেউ মাছ নামাচ্ছে, কেউ গদিতে ডাকে (নিলাম) ব্যাস্ত।
বরফ লোড করে কেউ সাগরে পাড়ি জমানোর আয়োজনে দ্রুত সময় পার করছে। বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে মাছ ঘাটগুলো। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে স্বাধের সোনালী ইলিশ কিনতে মাছবাজার, ঘাট ও নদীর পাড়ে এখন হাজারো মানুষের ঢল।
একই অবস্থা কমলনগর উপজেলার কালকিনি, সাহেবেরহাট, পাটারীরহাট এবং বৃহৎ মাছঘাট মতিরহাটও। সব বাজারেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়। কেউ বিক্রি করে খুশি। কেউ ক্রয় করে খুশি।
বড় বড় ইলিশের ভীড়ে ঝাঁটকাও দেখা গেছে মাছ ঘাটের বাজারগুলোতে। তবে ক্রেতাদের আগ্রহ বড় ইলিশের দিকেই। ডিমওয়ালা বড় ইলিশের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।
ভরা মৌসুম হওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের পাইকারী ব্যাবসায়ীরাও ভিড় করছেন এখানে। প্রতিদিনই ট্রাক বোঝাই করে মাছ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে। চলতি মাস জুড়ে ইলিশের এই জোয়ার থাকবে বলেও জানান জেলেরা।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা নকিবুল হাসান জানান, বৃষ্টি বাড়লে আরো বেশি মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়বে। কমলনগরের বাত্তিরখাল ও টাংকিরঘাট এলাকায় এখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। আর ডিমওয়ালা মাছ বেশি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি সরকারী নির্দেশনা পেলেই অভিযান শুরু হবে।