মাহমুদ ফারুক, ১২ নভেম্বর:
ঢাকার মগবাজারের নয়াটোলার ভাড়া বাসার একটি কক্ষ থেকে বাবা খায়রুল ইসলাম সোহাগ মাল (৫৫) ও একই বাসার পাশের কক্ষ থেকে একইভাবে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ছেলে শাহরাব হোসেন ওরফে আরিয়ানের (১৪) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার রাতে ১৮১/ডি নয়াটোলায় পঞ্চম তলার একটি ফ্লাটের বাসা থেকে বাবা-ছেলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে জানান নিকটাত্মীয়রা।
খায়রুল ইসলাম সোহাগ মাল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কলচমা গ্রামের মালের বাড়ীর মৃত সিরাজ মালের সেঝ ছেলে ছেলে। এছাড়া তিনি ২০১৫ইং সনের রামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন বলে জানান স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
এদিকে খায়রুল ইসলাম সোহাগ মাল ও তার একমাত্র ছেলে আরিয়ানের মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
হৃদরোগে আক্রান্ত মেঝ ভাই মোঃ হারুন অর রশিদ ছোট ভাই সোহাগ মাল ও ভাতিজার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। কথা বলতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
রামগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও মৃত খায়রুল ইসলাম সোহাগ মালের চাচাতো ভাই লিটন মাল জানান, তার জেঠাতো ভাই সোহাগ মাল দীর্ঘদিন ঢাকায় ঠিকাদারী ব্যবসা করতেন। ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে সোহাগ মাল ছিলেন সেঝ। ছোট ভাইয়েরা ঢাকায় স্বপরিবারে বসবাস করতেন। ছোট ভাই নুরনবী জিসান সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের সচিব ও মনির হোসেন নামের আরেক ভাই ঢাকার তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন।
চাচাতো ভাই কাউসার মাল জানান, শেয়ার বাজারে তার বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। দীর্ঘসময় পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরও সুস্থ হচ্ছিলেন না। এছাড়া তাঁর একমাত্র ছেলে আরিয়ান ছিলেন অটিস্টিক। এসময় তিনি বাবা ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় অধিকতর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়ে বলেন, একটি অটিস্টিক ছেলে কিভাবে ফাঁসি দিলো?
স্থানীয় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খাইরুল ইসলাম সোহাগ মাল স্বপরিবার ১৮১/ডি নয়াটোলায় পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে কয়েক বছর ধরে ভাড়া থাকতেন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে স্বামী খায়রুল ইসলাম সোহাগ মাল ও ছেলে শাহরাব হোসেন আরিয়ানকে বাসায় রেখে স্ত্রী নাজমুন নাহার বাজার করতে যান। বেলা আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরে কলিংবেল বার বার টিপেও কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় তিনি দরজা ধাক্কাধাক্কি করে চিৎকার দিতে থাকেন।
চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ হোসেন পাঁচতলায় ছুটে আসেন। সেখানে গিয়ে প্রতিবেশী বাসিন্দাদের ভিড় দেখতে পান।
এসময় নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ হোসেনের কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলতেই দেখেন ড্রয়িং রুসের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় খায়রুল ইসলাম সোহাগের লাশ ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে পাশের কক্ষে গিয়ে দেখেন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে একমাত্র ছেলে শাহরাব আরিয়ানের লাশ।
পরে সোহাগ মালের স্ত্রী প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সিলিং ফ্যান থেকে বাবা ছেলের লাশ নামিয়ে আনেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
মেঝ ভাই হারুন মাল আরো জানান, তার ভাই খায়রুল ইসলাম সোহাগ মাল ব্যবসায় কোটি টাকা লোকসান করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। বাসা থেকে সাধারণত বের হতেন না। শারিরীক সমস্যার কারণে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় কয়েক মাসের বাসা ভাড়াও বকেয়া পড়েছিল। তাঁর ছেলে আরিয়ানও সারাক্ষণ বাসাতেই থাকত।
তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভাই ও নিকটাত্মীয়রা লাশ গ্রামের বাড়ী বা ঢাকার কোথায় দাফন করা হবে বলে নিশ্চিত করতে পারেননি।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন আমরা হাতিরঝিল থানা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেয়া হয়েছে।