মাহাবুবুল ইসলাম ভূইয়া, ২৭ জানুয়ারী: লক্ষ্মীপুরে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে স্থানীয় একটি সংগঠনের অফিস ব্যবহার করতে না দেয়ায় ইয়াবা সেবনের নাটক সাজিয়ে প্রধান শিক্ষককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে ওই সংগঠনের কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এসময় পরিকল্পিতভাবে কৌশলে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওই ভিডিওটি মঙ্গলবার রাতে (২৬ জানুয়ারী) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভাইরাল করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে (২৫ জানুয়ারী) সোমবার সন্ধ্যায় (উপবৃত্তি সংক্রান্ত) দাপ্তরিক কাজে সদর উপজেলার ১নং উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে এ নাটকীয় ঘটনার সম্মুখিন হন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ আলম। অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামসহ প্রধান শিক্ষককে আটকের দাবী করেন যুবসংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমান।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবা সেবনের কোন আলামত বা আটককৃত কাউকে খুঁজে পাননি তারা। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভূক্তভোগী মো. মাসুদ আলম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
অপরদিকে অভিযুক্ত মাকছুদুর রহমান একই এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় উত্তর হামছাদী যুবসংঘের সভাপতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ৫ বছর যাবত সহকারি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ আলম। সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গত কিছু দিন থেকে বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবনে অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি চায় স্থানীয় যুব সংঘের সদস্যরা। সরকারি ভবনে বেসরকারি কোন সংগঠনের অফিস ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তাদের প্রস্তাবের না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওই সংঘের সদস্যরা। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বিতাড়নের কৌশল করতে থাকেন তারা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় উপ-বৃত্তি সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজে বিদ্যালয়ে এলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা যুবসংঘের সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে ইয়াবা সেবনের নাটক সাজিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলমকে আটক করে। এসময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষের টেবিলের উপরে কয়েকটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি, সিগারেটের খালি প্যাকেট, মেঝেতে পলেথিনের কাগজে মোড়ানো সিগারেটের শেষাংশ, প্লাস্টিকের বোতল ও বোতলের ছিপি ইত্যাদি দিয়ে ইয়াবা সেবনের নাটক সাজিয়ে হেনস্তা ও ভিডিও ধারন করে যুবসংঘের সদস্যরা। তাদের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক।
তিনি আরো বলেন, যুবসংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমানের নেতৃত্বে সদস্যরা কলাপসিবল গেইটে তালা লাগিয়ে তাকে সন্ত্রাসী কায়দায় টানা-হেঁচরা করে লাঞ্চিত করে। পরে ইয়াবা সেবনের অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা চালায় তারা। এসময় তাকে জোরপূর্বক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে যুব সংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে যুবসংঘের অফিস ব্যবহার বিষয় নয়। প্রধান শিক্ষক ইয়াবা সেবন করেন এমন অভিযোগে গত ২৫ দিন যাবত হাতে নাতে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। ঘটনার দিন সদস্যদের সন্দেহ হলে বিদ্যালয়ে গিয়ে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামসহ তাকে আটক করে পরে আমাকে খবর দেয়া হয়। এতে নাটক সাজানোর প্রশ্নই আসে না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা সহকারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মফিজ উল্যা বলেন, খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাসহ স্থানীয়রা এগিয়ে এলে প্রথমে ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয় ওই সংঘের সদস্যরা। পরে তাঁর অনুরোধেই উপস্থিত যুবসংঘের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে মুক্তি পান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম। তবে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে যুবসংঘের অফিস করতে না দেয়াকে কেন্দ্র করে এ সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার আগে কাউকে দোষী বলা উচিত নয়। শিক্ষাজীবন থেকেই প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলমকে দেখে আসছি। বিভিন্ন মিডিয়ায় যা ছাপা বা প্রচার হয়েছে, এমন নোংরা কাজ করতে পারে না সে। তবুও আমরা তদন্ত করে দেখবো।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি একজন গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে শুনেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দোষী প্রমানিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া ঘটনাটি যদি ষড়যন্ত্রমূলক হয়, তাহলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
লক্ষ্মীপর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবা সেবনের কোন আলামত বা কাউকে খুঁজে পাননি তারা। তাছাড়া এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি কেউ।