মাজেদ হোসেন, ২১ ফেব্রুয়ারি: পৌরসভা নির্বাচনের দিন যতোটা ঘনিয়ে আসছে, ততোটাই বাড়ছে উত্তাপ। ৬ মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর গণসংযোগ, প্রচারনা, পোস্টার ব্যানার, লিফলেট, মিছিল-সমাবেশে সরগরম হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহর।
দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পেশাদার শিল্পীদের কন্ঠে রেকর্ড করা গানের মুর্চ্ছন্নার মধ্যে দিয়ে প্রার্থীদের গুনকীর্তণ করে চলছে প্রচারণা। কেউ কেউ স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ঘোষণা করছেন ইশতেহার।
অনেকেই আবার বিগত দিনে দায়িত্বশীলদের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ভোটারদেরকে ভোট প্রদানে সচেতন থাকার অনুরোধও জানাচ্ছেন ভোটারদের। এবারের নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি। প্রচার প্রচারনায় প্রবীনদের চাইতে নবীনরা অনেক এগিয়ে থাকলেও ভোটারদের হিসাব নিকাশে প্রবীনরাই এগিয়ে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভার ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২৩ হাজার ৬শ’ ৩১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৯শ’ ৯০জন ও মহিলা ভোটার ১১ হাজার ৬শ’ ৪১ জন। এখানে ৯টি ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩টি। প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মেয়র পদে ৬জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫০ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নারী পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট (নৌকা প্রতীক) পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম জিলানী (ধানের শীষ প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক মনির আহম্মেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা মোঃ নাছির উদ্দিন সগির (পানির জগ), স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর শ্রমিকলীগ নেতা মাসুদ উদ্দিন (নারিকেল গাছ) ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা আব্দুল খালেক (হাতপাখা)।
নৌকার প্রার্থী মোঃ গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, আওয়ামীলীগ ও নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং সরকারের কাছ থেকে বরাদ্ধ আনতে এখানে নৌকার বিকল্প নেই।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, এখানে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক শোডাউন করে তারা কোনো ওয়ার্ডে কর্মী সমাবেশ করতে পারেননি। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। পৌর কমিটিতে কোন্দল থাকায় বিগত দিনের তুলনায় এখানে এবার বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। একারণে তিনি এবার দলীয়ভাবে একচ্ছত্র সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ধানের শীষের প্রার্থী এবিএম জিলানী বলেন, নেতাকর্মীদের সাথে কখনোই আমার দূরত্ব ছিলনা। সাংগঠনিকভাবেও বিএনপি ও সহযোগি সংগঠন এখানে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। রায়পুর উপজেলায় ভোটের হিসেবে এটি বিএনপির দূর্গ বলে বিগত দিনেও প্রমানিত অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে ধানের শীষ।
মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মনির আহম্মদ বলেন, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলে ইনশাল্লাহ মোবাইল প্রতীক মেয়র জয়লাভ করবে।
এছাড়াও নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানো, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকি দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। রয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও প্রচারে বাধার অভিযোগ। রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে এ ধরনের লিখিত অভিযোগ করেছেন ধানের শীষ ও মোবাইল প্রতীকের দুই মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী
রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার দীপক বিশ্বাস বলেন, ভোট গ্রহণে ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রচারনা নিয়ে কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। সব অভিযোগই তদন্ত করে বিহিত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রার্থীর সমর্থকরা আরেক প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, সত্যি এটা দুঃখজনক।