মাহমুদ ফারুক, ২৮ ফেব্রুয়ারি: ভোট কেন্দ্রের বাহিরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান সব বয়সী ভোটার। দীর্ঘসময় পর ভোট কেন্দ্রের ভিতরে যাওয়ার পর নৌকার প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাটের এজেন্ট ও সমর্থকরা নৌকা প্রতীকে ওপেন ভোট দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন ভোটার।
এছাড়া ভোট কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আঙুলের ছাপ নিয়ে বৈধতা যাচাইয়ের পর ভোটারদের অনুমতি দেন কালো পর্দার আড়ালে গিয়ে ভোট প্রদানের জন্য। কিন্তু জোরপূর্বক ভোটারদের সরিয়ে মেয়র পদে নৌকায় ব্যালট সাবমিট করছেন নৌকার এজেন্ট নিজেই। আজ রবিবার পঞ্চম ধাপের পৌর নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার একাধিক ভোট কেন্দ্রে এভাবেই ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোট কারচুপি তদারকিতে প্রতিটি কেন্দ্রে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়। সার্বক্ষণিক ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেলেও ইভিএম-এ ভোট কারচুপির বিষয়ে তাদের নিরব ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
ভোটারদের অভিযোগ, কালো পর্দার আড়ালে মেয়র পদে ১টি এবং কাউন্সিলর পদে ২টি ইভিএম ব্যালট ট্যাব থাকলেও মেয়র পদের ব্যালট ট্যাবটি নৌকার এজেন্ট জোর করে দখলে নিয়ে যান এবং এজেন্ট নিজেই নৌকায় ভোট সাবমিট করেন।
সকাল ৯টায় রায়পুর মার্চেন্টস একাডেমির ভোট কেন্দ্রে ভোট কারচুপি চলছিল। এসময় নৌকার এজেন্টদের তদারকি করছিলেন রায়পুর উপজেলা আওয়ামীস্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক তানভির হায়দার রিংকু। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রিজাইডিং অফিসার রাকিব হাসান শোভন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতা ও তার কয়েকজন অনুসারীকে বের করে দেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকরা ভিডিও ধারণ করতে গেলে এক সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। এসময় তিনি সাংবাদিকের ধারনকৃত ভিডিও মুছে দিয়ে ক্যামেরা ফেরত দেন।
একইভাবে রায়পুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ, রায়পুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শায়েস্তানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বহিরাগত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দিয়ে নিজেরাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেন।
বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এবিএম জিলানী বলেন, প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামীলীগের লোকজন। তারা ভোটারদের পরিবর্তে নিজেরাই ইভিএম ব্যালট ট্যাবে নৌকায় ভোট সাবমিট করছে। আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা এ নির্বাচনের শুরু থেকেই বিভিন্ন ভুয়া অভিযোগ তুলে গুজব ছড়াচ্ছে।’
লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান জানান, ভোটারদের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।