মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান
আবু হেনা মোস্তফা কামালঃ
গ্রামের নাম চররামপুর। চারিদিকে ডাকাতিয়া নদী ঘিরে রেখেছে গ্রামটি। যেনো একটি দ্বিপ। এক সময়ে, গ্রামের মানুষের নিত্য বাহন ছিলো নৌকা ও ভেলা। গ্রামটির নাম শুনলে কেউ কেউ ভ্রু কুচকাতো। বর্ষায় কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে যেতো পুরো গ্রাম। ছিলো না বিদ্যুৎ সরবরাহ। দিন পাল্টে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে গ্রামে। নির্মাণ হয়েছে পাকা সড়ক ও সেতু। যুক্ত হয়েছে পাশের বড় সড়কের সঙ্গে। বিদ্যুতের আলোয় রাতের গ্রাম আলোকিত হয়ে উঠে। শিক্ষার হারও বেড়েছে আশান্বিতভাবে।
এ গ্রামেরই এক খ্যাতিমান বীর প্রয়াত ওয়ালিউল্যাহ নওজোয়ান। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতে উচ্চ শিক্ষিত লোক জনের দেখা মিলে। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা সাফল্যের আলো ছড়াচ্ছেন। নিরক্ষরমুক্ত ও আদর্শ গ্রামের দাবীদার তারা। গ্রামের প্রৌঢ় ও যুবারা সংগঠিত হচ্ছেন। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রাতিত্ব বন্ধন গড়তে বদ্ধপরিকর। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত কয়েক বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘সোসাইটি ফর বিউটিফুল চররামপুর’। গ্রামের সব শ্রেণি পেশার মানুষেরা এ সংগঠনের ছায়াতলে একতাবদ্ধ। যার ফলে গ্রামটি সর্বতভাবে বিউটিফুল হয়ে উঠার পথে। এ সংগঠনের আয়োজনে শুক্রবার মিলনমেলা বসেছে গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে। চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ছুটে গেছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিকসহ নানা গুনিজন। আয়োজন করা হয় ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিধি-নিষেধ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট সম্পর্কে, ‘তরুণ সমাজকে অবহিতকরণ ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি’ বিষয়ক আলোচনা সভার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সরকারের উপ সচিব ও চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধান অতিথি বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে ১৯২১ সালে ব্রিটিশরা আইন করেছে। কিন্তু, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নই। তাই, আনুমানিক ২০১৭ সালে কঠোর বিধান রেখে পুনরায় আইন প্রণয়ন করতে হয়েছে। একইভাবে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়েও কঠিন শাস্তির বিধান রেখে আইন করতে হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইন নিয়ে সারা বিশ্বে কথা হচ্ছে। আমি স্বাধীন মত প্রকাশে শ্রদ্ধাশীল। এটা আমাকে সংবিধান শিখিয়েছে। তা’বলে, স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগে রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্ব, জাতির পিতা, অন্যের অধিকার, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এর প্রতি বিরূপ মন্তব্য, অবজ্ঞা প্রকাশ করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, আমরা চাইলেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। প্রযুক্তির সাথে আধুনিক জীবনযাত্রা জড়িয়ে গেছে। কিন্তু, প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। প্রযুক্তির সঠিক ও যথাযথ ব্যবহারের জন্য তরুণ-তরুণীদের সচেতন হতে হবে। আমার হাতে একটি মোবাইল ফোন ও প্রযুক্তি আছে। এ সুযোগে আমরা যেনো রাষ্ট্র ও নাগরিকের অধিকার খর্ব না করি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাউকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন না করি। প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিনামাইট আবিস্কার হয়েছিলো পাহাড় কেটে সমতল করার জন্য। কিন্তু, আমরা তা মানুষের ওপর নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করতে পারি না। একইভাবে, দা তৈরী হয়েছে মাছ-সবজি কাটার জন্য। কিন্তু, আমরা দা দিয়ে মানুষ কোপাতে পারি না। তিনি বলেন, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষককে ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের লোকদের সম্মিলিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রয়োজনে শাসন করতে হবে। মনে রাখতে হবে সামাজিক অধঃপতনের জন্য সম্মিলিতভাবে সবাই দায়ী। আমি, আমার ছেলে-মেয়েকে একা ভালো রাখতে পারবো না। সমাজের অধিকাংশ তরুণ-তরুণী ভালো না থাকলে, তাদের মধ্যে কারও সন্তান একা ভালো থাকবে এ চিন্তা অদূরদর্শী। তিনি বলেন, ‘সোসাইটি ফর বিউটিফুল চররামপুর’ এর মতো গ্রামে গ্রামে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। একটি দায়িত্বশীল প্রজন্ম নির্মাণ করতে সামাজিক আন্দোলন তৈরী করতে হবে। তরুণ ও প্রবীণদের এক কাতারে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াস গ্রহণ করায় তিনি ‘সোসাইটি ফর বিউটিফুল চররামপুর’ এর সংগঠকদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সামাজিক প্রয়োজনে আমাকে যখনই ডাক দেবেন, আমি সাড়া দেবো। এ জন্য আমার অফিসের দরজা সকলের জন্য সব সময় খোলা রয়েছে। আপনাদের স্বাগতম।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এর সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান রানা, এভারগ্রীণ ক্লাব, চাঁদপুর এর সভাপতি ডাক্তার জালাল উদ্দিন রুমি।
সোসাইটি ফর বিউটিফুল চররামপুর এর সভাপতি দুদক এর সহকারী পরিচালক মোঃ ইসমাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সময় টিভি ও কালের কন্ঠ পত্রিকার চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ফারুক আহমেদ, গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, ইউপি সদস্য ইমরান হোসেন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন জানান, প্রতিষ্ঠার পর হতে এ সংগঠন অসংখ্য সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। করোনা মহামারি আঘাত হানার পর সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা, স্যানিটাইজিং ও খাদ্য সামগ্রি বিতরণ, এলাকা জীবাণূমুক্তকরণ ইত্যাদি কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এবারের শীতে প্রয়োজন ক্ষেত্রে বস্ত্র বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। আগামীতে বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক বেশ কিছু কর্মসূচী বিবেচনাধীন। তিনি এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন। উল্লেখ্য, কাতার প্রবাসী ও শিল্প কারাখানার মালিক জালাল আহমেদ সিআইপিকে সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত সর্বস্তরের অতিথিবর্গ ও জালাল আহমেদ সিআইপি এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা করেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কবির।