মাহমুদ ফারুক, ১৮ এপ্রিল: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে প্রকাশ্যে নাসরিন আক্তার মওসুমি (৪২) নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষিপ্ত এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ে মোঃ রাছেল মিয়া (৪৫) নামের এক হত্যাকারী নিহত হয়েছে।
নিহত গৃহবধু কাতার প্রবাসী সফিউল্যাহর স্ত্রী ও রাছেল মিয়া একই এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে ও পেশায় কাঠমিস্ত্রি। এসময় নাসরিন আক্তার মওসুমির ছেলে নাঈমুর রহমান ও ঝা রানু বেগমসহ আহত হয়েছেন তিন গ্রামবাসী।
স্থানীয় লোকজন পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বেশ কিছুদিন থেকে রাছেল মিয়া প্রবাসীর স্ত্রী নাসরিন আক্তার মওসুমিকে মোবাইলে বিরক্ত করতো। এমনকি দুজনের মাঝে পরকীয়ার সর্ম্পক সবাই জানতো।
ইদানিং নাসরিন আক্তার রাছেল মিয়াকে এড়িয়ে চলার কারনেই ক্ষিপ্ত রাছেল মিয়া এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায় বলেও জানান স্থানীয় লোকজন।
আজ রবিবার সকাল ৯টায় জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর ভাটরা ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামের উত্তর ভূইয়া বাড়ীর (নতুন বাড়ী) কাতার প্রবাসী সফিউল্লাহর বসতঘরে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ও রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
হত্যার শিকার গৃহবধুর ছেলে নাঈমুর রহমান জানান, আমি সকালে ঘুমে থাকা অবস্থায় পাশের বাড়ীর আনোয়ার হোসেন মোল্লাসহ একই এলাকার বলী মোল্লা বাড়ীর মোঃ রাছেল ঘরের দরজা খুলে দিতে আমার মাকে ডাক দেয়। এসময় তাদের ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
আমার মা প্রথমে দরজা না খুললেও পরে আনোয়ার মোল্লাকে দেখে আমার মা দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে রাছেল মিয়া ঘরে ঢুকেই আমার মায়ের গলায় ছুরি ধরে। এসময় আমার এক চাচীসহ আমি মা’কে উদ্ধার করতে গেলে রাছেল মিয়া আমাদের দুইজনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
কিছুক্ষণ পর আমি কয়েকজায়গায় কল দিলে স্থানীয় চৌকিদারসহ ছুটে আসে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী আসার সাথে সাথে রাছেল মিয়া গালাগাল করে আমার মাকে সবার সামনে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমি দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে সামনের ও পিঁছনের দরজাসহ ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলে ঘরের ভিতরে আটকা পড়ে রাছেল মিয়া।
রাছেল মিয়াকে আমাদের বসতঘরের ভিতরে আটকে রেখে বাড়ীর লোকজনসহ আমি মা’কে উদ্ধার করে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্ত্যব্যরত চিকিৎসক মাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসময় আমরা খবর পাই গ্রামবাসী আমাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে আমার মায়ের খুনী রাছেল মিয়াকে গণধোলাই দেয়। পরবর্তিতে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথে রাছেল মিয়াও মারা যায়।
মৃতের ঝা আহত রেনু বেগম জানান, আমার ঝা নাসরিন আক্তার মওসূমি নতুন বাড়ীতে মাত্র কয়েকদিন আগে উঠেছে। আজ সকালে চিৎকার শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রাছেল মিয়া আমার ঝায়ের গলায় দারালো ছুরি ধরে রেখেছে। এসময় আমরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে রাছেল আমার বাম হাতে কোপ দেয়।
লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার ড. এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে তদন্তে জেনেছি নাসরিন আক্তার মওসুমির সাথে রাছেল মিয়ার পরকীয়ার সর্ম্পক চলে আসছিলো। ইদানিং নাসরিন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে রাছেল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে আজ সকালে নাসরিন আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী রাছেল মিয়াকে গণপিটুনি দিলে সেও মারা যায়। লাশ দুটির সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হসপিটাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।