আমরা বাঙালি জাতি ধর্মভীরু, পালন যতটুকু করি, তর্কে তারচেয়ে শতগুণ পটু।
চায়ের দোকান কিংবা ফেবুতে একেকজন যেনো সাক্ষাৎ মুফতি। ইদানীং কেউ কেউ মানবিক কাজের প্রচারের কড়া সমালোচনা করেন, তাদের যুক্তি হলো তারা দান করলে গোপনেই করবেন, উপকার করতে পারলে গোপনেই করবেন, দেখানোর জন্য না।
অতি উত্তম কথা।
আমরাও শতভাগ একমত। একবাটি খিচুড়ি বা এক প্যাকেট বিরিয়ানি দিয়ে ১০ জনে সেলফি তুলবেন কিংবা সামান্য সাহায্য দিয়ে তার ছবি অনুমতি ব্যতীত ফেবুতে পোস্ট দিবেন, আমরা তার ঘোর বিরোধী।
তাহলে প্রচার কেনো প্রয়োজনঃ
প্রথমতঃ যে কোনো কাজ করতে গেলে সদিচ্ছার পাশাপাশি সংগঠন লাগে। আমাদের মানবিক তরুনরা নিজেরা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সংঘটিত হয়ে রক্তদান সহ সমাজ হিতৈষী নানা কাজে যুক্ত। তারা “ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়”। নিজের পকেট খরচ বাচিয়ে অল্প অল্প করে একসাথে করে যখন কোনো অসহায় লোকের হাতে তুলে দেন কিংবা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও নিজের খরচে গিয়ে রক্ত দান করেন,সে সংক্রান্ত একটা পোস্ট কি অন্যায়?
এগুলো দেখে অন্যরাও অনুরূপ কাজে উৎসাহিত হয়, পাশাপাশি অসহায় মানুষ ও কোথায়,কোন সংগঠনের কার কাছে গেলে সাহায্য পাবে তা জানতে পারে। সংগঠনের কার্যক্রম দেখে মানুষ ও ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ মানুষের আর্থিক সামর্থ সীমিত। কোনো অসহায় মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে সামান্য সাহায্য করলে সাময়িক ভাবে উপকৃত হলেও সে সারাজীবন পরনির্ভরই থাকবে কিংবা একজন অসুস্থকে কিছু টাকা দিলে সে হয়ত সামান্য ঔষধ কিনতে পারবে কিন্তু পূর্ণ চিকিৎসা করে সুস্থ হতে পারবেনা।
সেজন্য বিক্ষিপ্ত সাহায্যের বদলে যদি কোনো সংগঠনের ব্যানারে সবাই মিলে সাহায্য করলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।
তৃতীয়তঃ তরুনরা মানবিক কাজে জড়িত থাকলে সমাজ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি তারাও মাদক কিংবা জঙ্গিবাদে জড়ায়না।সেটাও সমাজ কিংবা রাষ্ট্রেরই লাভ।
বাস্তব অভিজ্ঞতা:
আমাদের পাশের গ্রামে একটা রুগীর দুপায়ের পাতা পঁচে পঁচে পড়ে যাচ্ছিলো, হাতেও পঁচন ধরেছিলো। পঁচা দূর্গন্ধে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে, কেউবা ভয়ে এড়িয়ে যেতো।লোকজন ধরেই নিয়েছিলো তার আর চিকিৎসা নেই, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।
অনেক মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে তাকে দান করেছে, সে কিছু ঔষধ সেবন করেছে কিন্তু চিকিৎসা হয়নি। শেষে SI Jahir এর পোস্ট থেকে জেনে আমরা রুগীর বাড়ী যাই, কথা বলি তার সাথে।
নিজেরা একত্রিত হই- বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করি-সাহায্য কামনা করি।
অবশেষে ঢাকায় এনে ৪ মাস হাসপাতালে রেখে ২ বার পায়ের অপারেশন করিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে বাড়ী পাঠাই। আলহামদুলিল্লাহ সে এখন ভালো আছে।
দোকানে অন্য সবার পাশাপাশি সে ও বসে, কেউ আর নাক সিটকায় না। সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় তার হুইল চেয়ারেরও ব্যবস্থা হয়েছে।
আল্লাহর অনুগ্রহ ও সম্মিলিত সহায়তা ছাড়া তা সম্ভব হতোনা।
পরিশেষে বলবো, গোপন দান অবশ্যই উত্তম-কিন্তু অন্যকে উৎসাহিত করতে এবং বৃহৎ পরিসরে মানবিক কাজ করতে গেলে প্রকাশ্য দান ও প্রচার দোষনীয় নয়। আল্লাহ দেখেন নিয়ত ও অন্তর। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।
আমীন।
ফারুক সালেকীন।