১২ মে ২০১৫ইং। রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে বা কেউ কেউ এইচ এস সির গন্ডি পার করেছে। অধিকাংশই রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় বা রামগঞ্জ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা রামগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় বা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরাও যে ছিলো না, তা কিন্তু না। সংখ্যায় কম বা বেশি।
ঢাকার বসুন্ধরা সিটি এলাকা বা রামগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বসে নীতি নির্ধারকদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত হয়, অত্র উপজেলা ও দেশের মানুষের জন্য এমন কিছু করা যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয় সবচেয়ে বেশি। অসহায়, দরিদ্র এবং দুস্থ্যদের জন্য ভালো কিছু করা। এটাই ছিলো সবার অন্তরে।
মতামত, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় “রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব।
১২ মে ২০১৫ইং রামগঞ্জ পৌর বাইপাস সড়কের পাশে আয়োজন করা হয় ফ্রি ব্লাড গ্রুপ ক্যাম্পেইন। প্রচণ্ড ঝড় আর তীব্র বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাত্র শতাধীক মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়েছে। অনেকে বিষয়টি না বুঝতে পেরে খুব একটা ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি।
প্রথম রক্তদাতা হিসাবে এ বোনকে রক্তদান করেন, বর্তমান অর্থ সম্পাদক রায়হানুর রহমান (রায়হান মুন্সী) এবি পজেটিভ। তৎসময়ের জনতা মা শিশু ও জেনারেল হসপিটালে।
সে—ই থেকে শুরু। রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের সদস্য, শুভকাঙ্খি, বন্ধুরা অধ্যাবদি এ সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। সহযোগীতা করেছেন নিজের সামর্থ অনুযায়ী। প্রায় ৪ হাজার ব্যাগ রক্তদান ইতোমধ্যে করা হয়েছে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে। সংগঠনের সদস্য সংখ্যাও বাড়তে থাকে, সংগঠনের পরিধিও বাড়তে থাকে। ছোট্ট একটি অফিস নেয়া হয় মাত্র একটি টেবিল ও ৬টি চেয়ার দিয়ে। আজ এ সংগঠনের পরিধি অনেক বিশাল। এ সবই হয়েছে রামগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহান মানুষের আন্তরিকতা এবং ভালোবাসায়। বর্তমানে নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ২২জন এবং উপদেষ্টা রয়েছেন জন।
উপজেলাব্যপি মানবিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখে মানবিক কাজে এগিয়ে আসায় সর্বস্তরের মানুষের থেকে পেয়েছে অকুণ্ঠ ভালোবাসা আন্তরিকতা আর সহযোগীতা। উপজেলার বাহিরে জেলাসহ সারাদেশ, বিশে^র বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু সদস্য এবং শুভাকাঙ্খি ছড়িয়ে রয়েছে অত্র সংগঠনের। সংগঠনের কার্যক্রম দেখে অনেকেই উৎসাহিত এগিয়ে এসেছেন নিজেদের এলাকায় মানবিক কাজে সময় দিতে।
কথায় আছে, সময় এবং স্রোত বহমান।
সময় স্রোত, কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। দেখতে দেখতে ৭ বছরে পা দিয়েছে রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব। সদস্যরা যার যার মতো করে আন্তরিকতা, ভালোবাসা এবং অনেকেই নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে সংগঠনের বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা করে আসছেন।
আমাদের সামর্থ প্রমানের সুযোগ হয়েছে করোনার এ ক্রান্তিকালে। করোনার ক্রান্তিকালে জেলার রামগঞ্জ উপজেলাবাসী স্বচক্ষে দেখেছেন রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের কার্যক্রম। করোনায় মৃত মানুষের দাপন কাজে অংশগ্রহণ, অক্সিজেন সেবা, অ্যাম্বুলেন্স প্রদান, পিপিই প্রদান, মাস্ক-স্যানেটাইজার, খাদ্যদ্রব্য বিতরণে শিক্ষাবিদ ও দানবীর মানুষদের অবদান ছিলো নিঃসন্দেহে চোঁখে পড়ার মতো।
এসব কাজে যে বাঁধা আসেনি তাও কিন্তু না। হাতেঘোনা দুই চারজন মূর্খ সবসময়ই এ ধরনের মানবিক কাজের বিরোধিতা করেছে। আমাদের স্বপ্ন ছিলো এগিয়ে যাওয়ার, তাই পিঁছনে তাঁকানোর প্রয়োজন পড়েনি। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সরকারী নিবন্ধন পর্যন্ত পায়নি রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব।
আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যতদিন আমাদের ভালো কিছু করার চিন্তা চেতনা হৃদয়ে থাকবে, বুকে থাকবে। ভালো কাজ করতে স্বীকৃতির দরকার হয় না বা হবেও না। অসহায়-দুস্থ্য ও রক্তগ্রহীতাসহ নিকটাত্মীয়দের দোয়া আর অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের চলার পথকে আরো মসৃণ করবে বলে বিশ্বাস করি।
আর যেদিন পারবো না, সেদিন সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদেরকে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো।
সবার আসছে দিন সুখময় হোক এ কামনায়..
মাহমুদ ফারুক
সভাপতি
রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব।