তাবারক হোসেন আজাদ: ‘আল্লায় যদি মারে বাঁচানোর কেউ নেই। আর যদি আল্লায় করোনায় মৃত্যু রাখে তখন কেউ সামনেও আসবে না।
তাই জীবনের শেষ ঈদ মনে করে মরার আগে পরিবার নিয়ে একটু আনন্দ করে যাই। যাতে কোনো আফসোস না থাকে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল বন্ধ, খেলার মাঠে যেতে দিই না। দীর্ঘদিন ঘরে থেকে মোবাইলে আসক্তি বেড়ে কেমন জানি প্রতিবন্ধীদের মতো হয়ে যাচ্ছে।
তাই ঝুঁকি নিয়ে একটু ঘুরতে আসলাম।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনার পাড়ে আলতাফ মাষ্টারঘাটে ঘুরতে আসা গৃহবধু শারমিন আক্তার, মাহবুব আলম ও ব্যাবসায়ী সুমন।
শনিবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ মাষ্টারের মাছ ঘাটে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় ঈদে আশপাশে দল বেঁধে ঘুরছে তারা।
নেই স্বাস্থ্যবিধি, করোনার ভয় বা মানছে না কেউ লকডাউন। সব কিছু উপেক্ষা করে মেঘনানদীর পাড়ে এ ঘাটে এলাকায় মানুষের ঢল নেমেছে।
ঈদের আনন্দসহ নদী এলাকার দৃশ্য উপভোগ করতে রায়পুর উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার ও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদের দিন থেকে বিনোদনপ্রেমী হাজারো মানুষ ভিড় করছেন ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা নদীর তীর ও খোলা জায়গায় ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। দর্শনার্থীরা বলছেন, ঈদ আনন্দ উপভোগে এ অসাধারন মেঘনার তীড়ে ছুটে এসেছেন।
দক্ষিন এশিয়া মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী মৎস প্রজনন ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র, জীনের মসজিদ, রামগতি নদীর পাড়, কমলনগরের মতিরহাট, হায়দরগঞ্জ নদীর পাড়ে, নতুনভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খোয়াসাগর দিঘিরপাড়, দালাল বাজার জমিদার বাড়িতে ঈদের দিন বিকাল প্রতিটি পর্যটন এলাকা ছিলো প্রচণ্ড ভীড়।
লকডাউনের কারণে সরকারী বিনোদন কেন্দ্র বা শিশুপার্ক বন্ধ থাকায় তারা আশপাশের খোলা জায়গায় গাদাগাদি করে বসে সময় পার করছে।
সবাই আনন্দপূর্তিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ ব্যস্ত সেলফি নিয়ে।
এসব খোলা জায়গায় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন খাবার ও চটপটির দোকান এবং কারুপণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
মেঘনার তীর ঘেঁষে বিভিন্ন ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। এসময় কারো মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক বা সামাজিক দুরুত্ব।
মেঘনা নদীর তীরে কারুপণ্যের দোকানি হামিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন মাছ ঘাটটি বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা ব্যবসা করছেন।
একই অবস্থা দেখা গেছে রামগতি নদীর পাড় ও কমলনগরের মতিরহাট এলাকায়।
পিকআপ, ট্রাক, মাইক্রোবাস নিয়ে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। বেশিরভাগ পিকআপে ছোট ছোট কিশোর যুবকদের হই হট্টগোল। পিকআপে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে বিকট আওয়াজে গান চলছে, মজা মাস্তিতে মাতোয়ারা সবাই।
তবে স্থানীয় মওসূমি ব্যবসায়ীরা এতে খুশি হলেও সাধারণ মানুষ বিরক্ত খুব। সাউন্ডবক্সের বিকট আওয়াজে অতীষ্ট স্থানীয় লোকজন প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন।
রায়পুর থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, সকলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়েছে যেন, এসময় সবাই লকডাউন মেনে চলে।