মাহমুদ ফারুক:
সৌদিগামী আলমগীর হোসেন, বাড়ী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে। জীবিকার তাগিদে প্রথমবারের মতো সৌদি আরব যাচ্ছেন তিনি। বয়স ৪০ এর নীচে হওয়ায় বাধ সেঁেধছে করোনা টীকার প্রথম ডোজ। এছাড়াও চলতি বছরের ১৮এপ্রিল থেকে করোনা টীকার প্রথম ডোজ সরকারীভাবে বন্ধ হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রবাসীদের জন্য কোন ধরনের নির্দেশনা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন আলমগীর হোসেনের মতো শত শত বিদেশগামীগণ। এ চিত্র লক্ষ্মীপুর জেলার সব উপজেলার।
অভিরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেন দীর্ঘদিন ছিলেন সৌদি আরবে। চলতি বছরের জানুয়ারীতে তিনি দেশে ছুটিতে আসেন। বিদেশে থাকার কারনে করা হয়নি ন্যাশনাল আইডি কার্ড। ছুটিতে আসার কয়েকদিন পর রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার টীকা নিতে গিয়ে পড়ে জটিলতায়। বয়স কম হওয়ায় ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড না থাকায় তিনি টীকা নিতে পারেননি। পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন দিয়ে করা হচ্ছে না টীকার রেজিস্ট্রেশন। ন্যাশনাল আইডি কার্ড জটিলতা ও বয়স ৪০এর নীচে হওয়ায় রুবেলের মতো অনেকেই টীকা নিতে না পারায় পড়েছেন চরম বিপাকে।
রুবেল হোসেন জানান, আমার বয়স ৪০এর নীচে হওয়ায় সরকারী হসপিটালে করোনার টীকার প্রথম ডোজ নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, গতকাল (২০ মে) থেকে সৌদি সরকার করোনা বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। যারা সৌদি থেকে ছুটিতে বাড়ীতে এসে আবার সৌদিতে ফেরত যাবেন তারা অবশ্যই করোনা টীকার সনদ সাথে নিতে হবে। যদি করোনা টীকার সনদ না থাকে তাহলে সে দেশের নিয়ম অনুযায়ী ৭দিনের হোম কোয়ারেন্টানে থাকতে হবে। আর তার জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন গুনতে আড়াইশ রিয়াল। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৮হাজার ৫শ টাকা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কোন মাথাব্যথা ও সমাধানের ব্যবস্থা নেই বলে দাবী করে প্রবাস ফেরত বা বিদেশগামীরা অভিযোগ করে বলেন, করোনা লকডাউন বা অফিস আদালত বন্ধ থাকায় জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে বার বার গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। নতুন করে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের তথ্য নেয়া বন্ধ এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডও দেয়া বন্ধ রয়েছে। আমরা প্রবাসে থাকার কারনে ন্যাশনাল আইডি কার্ড করার সম্ভব হয়নি। অপরদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই প্রবাসে যায় ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকার ৪০ বছরের নীচে কাউকে টীকা না দেয়ার আইন করায় সে বিষয়ে আমরা চরম হতাশায় ভুগছি। যারা নতুন করে বিদেশে যাবেন তাদের জন্য আরো বিপদ। একটা লোক বিদেশে যাওয়ার পরপরই তো চাকরীতে জয়েন্ট করতে পারবেন না বা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পাবেন না। তারা বিদেশে গিয়ে দেশ থেকে টাকা নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। দেশভেদে কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য প্রবাসীদের গুনতে হবে ৪০হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদগণের (করোনার টীকা বিষয়ক কর্মকর্তা) সাথে। তারা জানান, গত ১৫দিনে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে প্রায় শতাধীক লোক এসেছেন। আমাদের কিছুই করার ছিলো না। এপ্রিলের ১৮তারিখ থেকে করোনা টীকার প্রথম ডোজ বন্ধ। ফরেন অ্যাপসে এপ্লিকেশনে গিয়ে পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধনের সনদ দিয়ে কাজ করার সম্ভব হয়নি। আবার কেউ কেউ রেজিষ্ট্রেশন করে টীকা নিয়ে চলে যাওয়ায় সে রেজিষ্ট্রেশন কার্ড স্কেন না করায় অনেকেই সনদ নিতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ড. আবদুল গফফার জানান, এ ব্যপারে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা নেই। তবে আমি বিদেশগামী বা প্রবাস ফেরতদের বলবো তারা যেন নোয়াখালী বা ঢাকায় যেসকল হসপিটাল থেকে করোনা সনদ দেয়া হয় তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। তারা ব্যবস্থা করে দিবেন।
ঐ হসপিটালগুলো তো করোনা নেগেটিভ বা পজেটিভ সনদ দিতে পারে, সরকারী সনদ তো তাদের দেয়ার সুযোগ নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু এ মুহুর্তে বলতে পারছিনা। আমি জেনে আপনাকে জানাবো।