
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন প্রেমের সর্ম্পক। প্রেম গড়ায় বিয়েতে। বিয়ের পর বেরিয়ে পড়ে প্রেমিক মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামের আসল চেহারা। ঘরে শিক্ষিত ও সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্বেও নিজ কর্মস্থলের আরেক মেয়ের সাথে চলে গোপনে সর্ম্পক। আর এ গোপন সর্ম্পকের বলী হলো নিজের স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয়া সদ্যজাত কন্যা শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে চলতি মাসের গত ১ মে।
মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম। ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার দুধনই গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের মেঝ ছেলে।
অপরদিকে স্ত্রী (নাম গোপন রাখা হলো) লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
প্রতারনার শিকার প্রেমিকা জানান, গত কয়েকবছর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামের সাথে মোবাইল ফেইসবুকের মাধ্যমে গত কয়েকবছর থেকে পরিচয়। পরিচয়সূত্রে সিয়াম আমাকে জানান তিনি একটি টিভি চ্যানেলের ভিডিও এডিটর হিসাবে কর্মরত। হয়তো কয়েকমাসের ভিতরেই সময় টিভিতে ভালো বেতনে সিয়াম যোগদান করতে পারবেন।
পরিচয়ের এক পর্যায়ে দুজনের মাঝে গভীর প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। সে সুবাধে দীর্ঘসময় থেকে মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম আমাকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বিষয়টি আমি আমার বাবা ও বড় বোনদের জানালেও সিয়াম তার পরিবারের নিকট বিষয়টি গোপন রেখে (কখনো কখনো পরিবার রাজি নয় বলেন) আমাকে পালিয়ে বিয়ের করার জন্য প্রস্তাব দেয়।
তার এমন প্রস্তাবে আমি প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করলে সিয়াম আমার সাথে সর্ম্পক বিচ্ছিন্নসহ আমার সাথে তার ফেইসবুক চ্যাটিং ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দেয়। এসময় আমার ও পরিবারের সন্মানের কথা ভেবে এবং ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর ভয়ে আমি তাকে গোপনে বিয়ে করতে সম্মত হই।
এরই সূত্র ধরে ২০১৯ইং সনের ১০ জানুয়ারী মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম আমাকে বিয়ে করতে ঢাকা থেকে আমার নিজ উপজেলা রামগঞ্জে ছুটে আসেন। স্থানীয় একটি কাজী অফিসের ইসলামি শরিয়ামতে ১লক্ষ টাকা দেনমোহরে মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামের সাথে আমার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিয়ে করে ঐ দিনই সিয়াম চলে যান ঢাকায় তার কর্মস্থলে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক চললেও আমি আমার স্বামীকে বিয়ের ঘটনা তার পরিবারকে জানানোর জন্য তাগিদ দিলে সিয়াম বার বারই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকে।
কৌশলে আমি শাশুড়ি হাজেরা খাতুনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ২০২০ইং সনের ৩০ জুন সিয়ামদের বাড়ীতে চলে যাই। সেখানে প্রায় দুই মাস অবস্থান করার পর আমাকে সিয়ামের মা হাজেরা খাতুন টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এসময় আমার শাশুড়ি হাজেরা খাতুন আমার বাবার বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য ঝগড়ায় লিপ্ত হলে আমি বাধ্য হয়ে আমার বাবার বাড়ীতে চলে আসি।
পরবর্তি সময়ে আমার স্বামীর সাথে যোগাযোগ বেশ কয়েকবার আমি ঢাকায় স্বামীর সাথে দেখা করি এবং রাত্রি যাপন করি। এর পর বেশ কয়েকবার আমার স্বামী সিয়ামকে ঢাকায় একসাথে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার কথা বললে সিয়াম বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, বর্তমান কর্মস্থলে তার বেতন কম বলে সময় টিভিতে চাকুরী হওয়ার কথা বলে সিয়াম আমার কাছ থেকে বেশ কয়েক দফায় ৪৫হাজার টাকাও নিয়ে যায়। এসময় সিয়াম আরো জানান, সময় টিভিতে চাকরি হলে আমার স্বামী আমাকে ঢাকার বাসায় নিয়ে একসাথে থাকতে পারবেন।
কয়েকমাস আমি আমার স্বামী মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামকে আমার গর্ভে বাচ্চা এসেছে বলে জানালে আমাদের পরিবারে দেখা দেয় কলহ। এক পর্যায়ে সিয়াম আমাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। বাচ্ছা নষ্ট করার ব্যপারে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখে সিয়াম। বিষয়টি খটকা লাগলে আমি সময় টিভির প্রধান কার্যালয়ে খবর নিয়ে জানতে পারি সে যেখানেই যায় সেখানে মেয়েদের সাথে সর্ম্পক গড়ে এবং সর্বনাশ করে। বতর্মানেও বগুড়ার একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সর্ম্পক চলছে। সময় টিভি কর্তৃপক্ষের কাছে বিয়ের কথা গোপন রেখে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে চাইছে।
এদিকে আমার সন্তান জন্মদানের তারিখ ঘনিয়ে আসলে আমার স্বামীকে আমার বাড়ীতে আসার জন্য বার বার বলা হলেও সে অফিসের কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ে ফোন রিসিভ করাও বন্ধ করে দেয়।
গত মাসের ১ মে আমার প্রসব যন্ত্রনা দেখা দেয়ার পর আমি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেই। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর আমার ও শিশুটির শারিরীক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে আমার বড় বোন জোহরা জান্নাত লতা মোবাইল ফোনে আমার স্বামীকে আসার জন্য বার বার তাগিদ দিলেও সে অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
বাধ্য হয়ে নিকটাত্মীয়রা আমাকেও আমার সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার শাকতলা মর্ডাণ হসপিটালে ভর্তি করেন। ৫দিন এনআইসিওতে থাকার পর ৫ মে আমার নিস্পাপ শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সদ্যজাত শিশুটির মৃত্যুর কথা বার বার সিয়ামকে জানানোর পরও সিয়াম আমাকে এবং আমার মৃত সন্তানকেও দেখতে আসেননি। বিষয়টি আমার স্বামী, তার মা ও বোনের স্বামীকে জানালে আমার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে তালাকের হুমকি দেয়। কয়েকবার বিয়ে হয়নি বলেও জানান সিয়াম। বর্তমানে আমি আমার বাবার বাড়ীতে অসুস্থ্য অবস্থায় রয়েছি।
বিষয়টি আমি সময় টেলিভিশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে আমার স্বামী মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম আমার পরিবারের লোকদের আমাকে তালাকের হুমকি দিয়ে বাড়াবাড়ি করলে পরিনতি ভয়াবহ হতে পারে বলে জানায়। এ ঘটনায় আমি সঠিক তথ্য সময় টিভির প্রধান কার্যালয়ে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেরণ করলে চলতি মাসে সময় টিভি থেকে তাকে চাকুরীচ্যূত করা হয়।
এছাড়া আমি জানতে পারি মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম নিজেকে সময় টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর বা কখনো কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একের পর এক এ ধরনের সর্ম্পক গড়ে মেয়েদের সর্বনাশ করাই তার মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে আমার স্বামী মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম আমাকে ২০১৯ইং সনের ১০ জানুয়ারী বিয়ে করলেও গত ২২ জুন ২০২১ইং তারিখে ঢাকার একটি কাজী অফিস থেকে আমাকে ২০১৫ইং সনে বিয়ে হয়েছে বলে একটি তালাকনামা প্রেরণ করে। এখানেও সে প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে বলেও ভুক্তভোগী ঐ নারী দাবী করেন।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম সাংবাদিকদের জানান, আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। আর কৌশলে বাচ্চাটি নিয়েছে। আমি ওকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হোসেন সিয়াম জানান, বিয়ের তারিখ কাজী সাহেব ভুল করেছেন। তবে কি কারনে পরিবারে অশান্তি বা তালাকের মতো ঘটনা ঘটেছে তার প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। কি কারনে সময় টিভি থেকে তিনি চাকুরিচ্যুত হয়েছেন, সে ব্যপারেও তিনি না বলে এড়িয়ে যান।
মোজাম্মেল হোসেন সিয়ামের বড় ভাই ঢাকার ব্যবসায়ী মোঃ রুবেল হোসেন জানান, আমরা ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রীকে ফিরে আসতে বলেছি। পরিবারে টুকটাক অনেক জামেলা হয়ে থাকে। এসময় তিনি আরো জানান, ঘটনাটি জানার পর আমি সিয়ামকে আমার বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছি।
সিয়ামের মা হাজেরা খাতুন জানান, আমি আমার বউকে আমার বাড়ীতে দেখতে চাই। আমার ছেলে ভুল করেছে। আমার ছেলে গত কয়েকদিন আগে বাড়ীতে এসেছে, আমরা তাকে গালমন্দ করায় সে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেছে। বর্তমানে সে কোথায় আছে আমরা জানি না।