
মাহমুদ ফারুক:
জেলার রামগঞ্জ পৌরশহরের বেশ কিছু সড়কসহ উপজেলার প্রত্যকটি ইউনিয়নের সংযোগ সড়কগুলোর বেহাল দশা।
দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাব আর নাম মাত্র সংস্কারের কারনে সড়কগুলোর ঝরাজীর্ণ অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। মূল সড়কগুলোর পাশাপাশি সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ সড়কগুলো সংস্কারের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন দিলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পকেটেই ঢুকছে প্রকল্পের টাকাগুলো। নামমাত্র সংস্কার করার কিছুদিন পরেই সড়কগুলোর দৈন্যদশা দেখা দেয়। এতে করে উক্ত সড়কগুলোতে চলাচলরত মানুষজন চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ভাঙ্গা ও গর্ত হওয়া রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন লোকজন।
বিগত ১৪/১৫ বছরে বেশিরভাগ সড়কের কোন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাগুলোতে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগঞ্জ সিএন্ডবি সড়কের সাতারপাড়া-নন্দনপুর সড়ক, সিএন্ডবি-কাঠবাজার সড়ক, আলিয়া মাদ্রাসা-মৌলভী বাজার সড়ক, ফায়ার সার্ভিস-সোনাপুর বাজার সড়ক, সোনাপুর মধ্যেবাজার সড়ক, সোনাপুর-বেড়িবাজার সড়ক (বেড়িবাঁধ), ষ্টেশন মডেল স্কুল-রতনপুর ও মধুপুর সড়ক, রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়-ডাকবাংলো সড়ক, দক্ষিণ বাজার-শিশুপার্ক ব্রীজ সড়ক, সরকারী হসপিটাল সড়ক, উপজেলা পরিষদ সড়কসহ পৌর শহরের অধিকাংশ সংযোগ সড়কের অবস্থা শোচনীয়।
রামগঞ্জ কাঠবাজারের পাঠকবন্ধু লাইব্রেরীর মালিক মোঃ আজিম জানান, রামগঞ্জ সরকারী কলেজের নাজিম গেইট থেকে গরু হাঁটা পর্যন্ত কয়েক’শ গজ সড়কটি দীর্ঘ ১৫ বছরেও সংস্কার হয়নি। সামনে কোরবানীর ঈদ। এ ঈদকে কেন্দ্র করে গরু হাঁটায় গরু কিনতে আসা লোকজনের নাভিশ্বাস দেখা দিবে। গরু ব্যবসায়ীরা গত কয়েকবছর থেকে বাধ্য হয়ে রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ও ঢাকা সড়কের মূল অংশে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে এ সড়কে ঈদকে ঘিরে দেখা দেয় চরম যানজটের।
মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও রামগঞ্জ বাজারের প্রেস ব্যবসায়ী আবুল বাশার জানান, সংস্কারকৃত অধিকাংশ সড়কে ভারী যান-বাহন চলাচল করায় অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেল পর্যন্ত চলাচল করতে হিমশিম খাচ্ছে।
ইছাপুর, হরিশ্চর, চন্ডিপুর ও কাঞ্চনপুরসহ পাশ্ববর্তি ফরিদগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাবাসীরা নানা প্রয়োজনে ৮/১০ কিলোমিটার দুরের সড়ক দিয়ে উপজেলা শহর ও গ্রামে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।
লামচর ইউনিয়নের লামচর, দরবেশপুর ও সমিতির বাজারের রফিক উল্যা, সালেহ আহম্মেদসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে মূল সড়কের পাশাপাশি সংযোগ সড়কগুলোর গর্তগুলোতে চলতি বর্ষায় ইট সুরকি দিয়ে ভরাট করার দেয়ার জন্য বার কয়েকবার বলেছি। এখনো তিনি বিষয়টি নিয়ে কর্ণপাত করেননি।
আমরা আশাবাদি আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে হয়তো দূর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে।
দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও দাসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোরশেদুল আমিন বাবু জানান, রামগঞ্জ থেকে দাসপাড়া, বেড়িবাজার, কালিকাপুর থেকে রামগঞ্জ উপজেলার দুরুত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। রাতে কোন সিএনজি বা অটো রিক্সা চালক এ এলাকায় আসতে চান না। আসলেও ভাড়া ২৫০-৩০০টাকা গুনতে হয়। একদিকে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি অন্যদিকে বড় বড় গর্তের কারনে দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী জাহীদুল ইসলাম জানান, পৌর শহরের সড়কগুলোর সংষ্কার কাজ করা মূলত পৌর মেয়রের। স্থানীয় সাংসদ মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্ধে হয়তো হাইওয়ে সড়কের কিছু কাজ বা সংষ্কার আমরা করতে পারি। এছাড়াও আমরা তালিকা করছি মোট কত কিলোমিটার সড়ক ভাঙ্গা। তারপর সংশ্লিষ্ট দফতরে চাহিদা দেয়ার পর কিছু সড়ক এ অর্থ বছরেই সংষ্কার বা পূণ:নির্মান করা সম্ভব হবে।
রামগঞ্জ পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন জানান, আমি বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার ওয়ার্ডের সড়কগুলো সংস্কারে। সম্প্রতি স্থানীয় সাংসদ মহোদয়ের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি খুব শীগ্রই এ সড়কগুলোসহ পৌর ও উপজেলার ভাঙ্গা সড়কগুলো সংস্কারে বরাদ্ধ প্রদানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী জানান, আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা দীর্ঘদিন আটকে আছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, সড়কগুলোর সাময়িক সংস্কার করতে। বরাদ্ধ পেলে আমরা শীগ্রয় সড়কগুলোর সংষ্কার ও নির্মান কাজ শেষ করতে পারবো। এছাড়া তিনি জানান, সড়কগুলো সংস্কারের সময় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হলে সড়কগুলোতে আর পানি জমে থাকবে না।