মাহমুদ ফারুক:
আইয়ে, এ কথা শুনার সাথে চারদিকে ধুপধাপ ধুপধাপ শাটার পড়তে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে খোলা রাখা দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাঘাট জনশুণ্য হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। অনেকেই আবার দোকানের বাহিরে লোক রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে ভিতরে গোপনে বেচাকেনা করছেন।
এ চিত্র জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে।
গত কয়েকদিনের কঠোর লকডাউন চলাকালীন সময়ে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, রামগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার প্রতিটি বাজার টহল জোরদার, মাস্ক বিহিন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে আসছে। এছাড়া আইন উপেক্ষা করে দোকান খোলা রাখার অপরাধেও গুনতে হচ্চে জরিমানা মামলা।
বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার দুপুরে রামগঞ্জ, সোনাপুর, পানিয়ালা, পানপাড়া, দল্টা, ভাটরা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাধ্য হয়ে তারা দোকান খুলছেন। দীর্ঘদিনের লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ তারা।
রামগঞ্জ বাজারের একজন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংকের লোন, ঘরের ৫ সদস্যের খাবার জোগান, পাওনাদারদের চাপ, দুইজন কর্মচারীর বেতন। খুব বিপর্যস্ত অবস্থা। দোকানের এক শাটার খুলে রাখি, বিকাশে টাকা প্রেরণসহ যদি কিছু বিক্রি হয়। কিন্তু বাধ সাধেন মোবাইল কোর্ট। তিনি জানান, এ পর্যন্ত দুইবারে ১৫শ টাকা জরিমানা দিয়েছি।
রামগঞ্জ সোনাপুর সড়কের সেলাই মেশিন ও সুই সুতা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, এখন দোকানের এক শাটার খুলে কোনরকম ক্রেতা ধরে রাখছি। প্রতি মাসে অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছি। কর্মচারী দুইজনকে বাধ দিয়েছি। সারাদিন বসে থাকলেও ক্রেতা কম। তারপরও খুলছি, ঘরে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে দোকান খোলার বিকল্প দেখি না। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
রামগঞ্জ জিয়া শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মোঃ মহসিন জানান, আমরা আছি মহাসঙ্কটে। সরকারী মার্কেট হওয়ায় আমাদের মার্কেট ইচ্ছা করলেই খোলা রাখা সম্ভব হয় না। আবার খোলা রাখলে প্রশাসনের নজরদারি বেশি থাকে মার্কেট ঘিরে। করোনার প্রকোপের কারনে লকডাউন অব্যাহত থাকলে ১৭১টি দোকানের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ দেওলিয়া হয়ে যাবে। অনেকেই ইতোমধ্যে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাজিব হোসেন জানান, প্রতিদিনই জরিমানা করা হচ্ছে মামলা দেয়া হচ্ছে। তারপরও রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা সদরের পরে রামগঞ্জ উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার বেশি। এখনো যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে সামনে আরো বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। এখনো সময় আছে ঘরে থাকুন-সুস্থ্য থাকুন। একান্ত বাধ্য না হলে যেন কেউ ঘরের বাহিরে বের না হয়।