মাহমুদ ফারুক: হাবিবুর রহমান, বয়স মাত্র ৯ বছর। ছটপটে শিশু হাবিবুর রহমান দুই ভাই বোনের মাঝে ছোট। এ বয়সে কাজ করে একটি চা দোকানে। মানসিক অসুস্থ্য বাবা মোঃ সবুজ দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ। মা, তাসলিমা বেগম আজ এ বাড়ী কাল ও বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।
লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় হতদরিদ্র তাসলিমা বেগম সংসার খরছ জোগান দিতে আঙ্গারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ক্ষুদে শিশু হাবিবুর রহমানকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন নিজের এক আত্মীয়ের চা দোকানে কাজ করতে দেন।
আজ মঙ্গলবার একটি প্রোগ্রাম শেষ করে চা দোকানটিতে গিয়ে পরিচয় হয় হাবিবুর রহমানের সাথে। জানায় তার সংসারের কথা, মায়ের কথা, বাবার কথা, ৫ম শ্রেণীতে পড়–য়া বড় বোনের কথা।
এ বয়সে চা দোকানে হাবিবুর রহমানকে কাজ করতে দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগলেও মনে হলো কিছুই করার নেই। একজন মা একজন অভিভাবক ইচ্ছে করেই তো আর তার শিশুকে চা দোকানে কর্মচারী হিসাবে দিবেন না। বাধ্য হয়েই হয়তো দিয়েছেন। মনটা খারাপ হয়, আমার বড় ছেলের বয়স ১৩ বছর-ছোট ছেলের বয়স সাড়ে ৪ বছর। আমার সন্তানরা এক গ্লাস পানি খেলেও বাবা মায়ের কাছে আবদার করেন। নিজে নিয়ে খায় না।
হাবিবকে কাছে ডাকলাম, বললাম আসো ছবি তুলি দুজনে। ছবি তোলার কথা শুনে দেখলাম শিশুটি চুল ঠিক করছে, আমি আশ্চর্য হলাম হাত দিয়ে তার চুল আঁচড়ানোর ভঙ্গি দেখে। হাসলাম।
ছবি তোলা শেষ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা মহোদয়ের অফিসে গিয়ে দেখি রামগঞ্জ পৌর এলাকার ৩২ জন দরিদ্র পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণের মাষ্টাররোল তৈরি করছেন। আমি অনুরোধ করলাম, মেম আমার জন্য একটা প্যাকেট বরাদ্ধ দিলে খুবই উপকৃত হতাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা আমার দিকে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে প্রশ্ন করলেন, কার জন্য প্যাকেট?
আমি তখন শিশু হাবিবের সাথে আমার ছবিটি দেখিয়ে সব কথা জানালাম। উনি সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী উপহারের একটি প্যাকেট আমার হাতে তুলে দিলেন। অবশ্য তা প্যাকেট বলা যাবে না, রীতিমতো চাল-ডাল-তেল নুনের প্রায় ২০ কেজি ওজনের একটি বস্তা।
বস্তাটি নিয়ে দোকানের বাহির থেকে হাবিবকে ডাকলাম, হাবিব বস্তাটি নিতে পারবে। সাথে সাথে উত্তর দিলো, ওরে বাবারে এতবড় বস্তা আমি কিভাবে নিবো। মুখে তার হাসি দেখে আমারও হাসি চলে আসলো। নিজে নেমে গিয়ে দোকানের ভিতরে বস্তাটি দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
কিছুক্ষন পরে শুনি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আন্নের লাই। আমি তাকে ডেকে প্রশ্ন করলাম, কাকে দোয়া করেছো-কেন দোয়া করেছো?
শিশু হাবিব জানায়, যিনি আমাকে চাল ডালের এ বস্তা দিলো তারে দোয়া করি। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম কে তোমারে প্যাকেটটি দিলো?
উত্তরে কি বললো বুঝতে না পারলেও এটা বুঝলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমাকে দোয়া করছে ছেলেটি।
ছেলেটির গ্রামের বাড়ী রামগঞ্জ পৌর আঙ্গারপাড়া গ্রামের রহমত উল্যা ব্যপারী বাড়ী।