মাহমুদ ফারুক:
সুজিত ও লব সরকার। পেশায় দুজনই ছিলেন ক্ষৌরকর্মকার। লকডাউনের কারনে পেশা বদলে সিলেট থেকে চলে আসেন রামগঞ্জে।
এসেই কুঁচিয়া (কুইচ্ছা) শিকার শুরু করেন। অবশ্যই শুধু তারা একাই নয়। বর্তমানে এ পেশার সাথে জড়িত ২৫ জন লোক তাদের সাথে রামগঞ্জেই রয়েছেন।
বর্তমানে ব্যবসাটি খুব একটা খারাপ না হলেও দাম কিছুটা কম হওয়ায় পুষিয়ে উঠছেন না বলে জানান, সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকার সোভানন্দের ছেলে লব সরকার (১৭) ও অমর চাঁনের ছেলে সুজিত কর্মকার (২৭)।
কথা হয় তাদের সাথে বিচিত্র পেশাটি নিয়ে।
তারা জানান, আমাদের মতো কয়েক শ পরিবারের সদস্যরা কৃষি ও নাপিতের কাজ করতেন বিভিন্ন এলাকায়। লকডাউনের কারনে গত দুই বছর বাপ-দাদার পেশা বদলে চলে আসেন রামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসেই কুঁচিয়া (উপজেলার মানুষের কাছে যা কুইচ্ছা বা নোয়াজী সাপ) শিকারে নেমে পড়েন। বিশেষ করে বর্ষাকালে জমিতে বা বিলে বড়শিতে কেঁচো গেঁথে চোঙ্গা আকৃতির এক প্রকার চাঁইয়ের ভিতরে রেখে পানির উপর রেখে দেয়।
সকাল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলে কুঁচিয়া শিকার। একেকজন প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি চোঙ্গায় কেঁচো দিয়ে বড়শি ভরে তা জমি বা বিলের উপর ঘাঁসের উপর রেখে দেয়।
সুজিত কর্মকার জানান, প্রতিদিন আমরা এসব কুচিয়া শিকার করে এক যায়গায় জড়ো করি। বড় বড় ড্রামে ভরে সপ্তাহের তিনদিন তা ঢাকার উত্তরায় পাঠাই। সেখানে আমাদের লোক তার খামারে রেখে দেন। পরে সারাদেশ থেকে কুঁচিয়াগুলো আসার পর চায়নাতে পাঠানো হয়। চীনে এ কুচিয়াগুলো মুখরোচক খাবার হিসাবে কেনা হয়।
এসময় তিনি আরো জানান, কেজি প্রতি এখন ১২০ থেকে ১৫০টাকা। যা আগে ছিলো ২০০টাকা প্রতি কেজি। লকডাউনের কারনে বর্তমানে রপ্তানি কম হওয়ায় দামও কম। তবে খুচরা বিক্রি করেন, ৩৩০টাকা কেজি।
আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন, লব সরকারের বাবা মাসহ ৩জন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্য পেশায় চলে যাবো। গ্রামে গিয়ে কৃষি বা বাপ দাদার পেশা বেছে নিতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, এটাকে আমরা স্থানীয়ভাবে সাপের মতো মনে করলেও তা অনেকের কাছের মাছের মতো খাদ্য। বাইম মাছের মতো বাংলাদেশেও অনেকেই কুঁচিয়া খায়। তবে আমি মনে করি কুঁচিয়া শিকারের কারনে জমির উর্বরা শক্তির কোন ক্ষতি হয় না।