নিজস্ব প্রতিবেদক:
রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পূর্ব বরিয়াইস দারুল কোরআন ইসলামিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও পূর্ব বরিয়াইস বায়তুল নাজাত জামে মসজিদ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে অভিভাবক, এলাকাবাসী, সাবেক কমিটির সদস্য ও মাদ্রাসার সদ্য গঠনকৃত কমিটির একাংশের সদস্যদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও জহিরুল ইসলাম, মো: সেলিমসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, উক্ত মসজিদ ও মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে হামলা মামলা ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এখন তা উস্কে দিতে আবারও সবার মতামত উপেক্ষা করে সভাপতি পদে মোঃ মুজিবুর রহমান স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরোজ আলমসহ কয়েকজনকে দিয়ে গোপনে মসজিদ কমিটি গঠন করে।
মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মোঃ ফরহাদ কাজী মোবাইল ফোনে তার অনুপস্থিতিতে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সদ্য গঠনকৃত মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান স্বপন এ কমিটি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাকে সভাপতি করা হয়েছে আমি নিজেই তা জানিনা। আজ (২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার) দুপুরে সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আলম আমাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান। আমি তাকে (ফিরোজ আলম) বলেছি, আমি বাড়ীতে আসলে বলতে পারবো আমি কমিটির সভাপতি থাকবো কি না।
জানা যায়, ২০০২ইং সনে স্থানীয় আবুল কালাম গং ও হাসেম ব্যাপারী পূর্ব বরিয়াইস বায়তুল নাজাত জামে মসজিদ ও ২০২০ইং সনের জানুয়ারীতে পূর্ব বরিয়াইস দারুল কোরআন ইসলামিয়া নূরানী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।
২০১৬ইং সনের জুন মাসে এলাকার মুসুল্লী ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাগণ ব্যাবসায়ী জামাল হোসেনকে সভাপতি ও ফিরোজ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে মসজিদের জন্য দ্বি-বার্ষিক একটি কমিটি গঠন করেন। মসজিদের উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখায় মুসুল্লি ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যরা উক্ত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।
সাবেক কমিটির সভাপতি জামাল হোসেন জানান, আমাদের কমিটি থাকা সত্বেও একটি স্বার্থান্বেসী মহল আরেকটি কমিটি গঠন করে মাদ্রাসা ও মসজিদ নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়। মাদ্রাসা ও মসজিদ নিয়ে এক ধরনের নোংরা রাজনীতি হওয়ার কারনে আমি গত ঈদ উল আযহার পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াই।
তিনি আরো জানান, দায়িত্ব ছাড়ার কয়েকদিন পর ১০ আগষ্ট সন্ধার পর আমার ছোট ভাই বেলায়েত হোসেনকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে হুমায়ুন কবীরসহ একদল সন্ত্রাসী। আহত হয় একই এলাকার সেলিম ও রাজু।
এ ঘটনায় ১৩ আগষ্ট রামগঞ্জ থানায় আমি বাদী হয়ে মামলা করলে রামগঞ্জ থানা পুলিশ হুমায়ুন কবীরকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এসময় তিনি আরো জানান, হুমায়ুন কবীর একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ২০১০ইং সনের ৫জুন একই বাড়ীর আবিদ মিয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামীসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জেল থেকে বের হয়ে আবারও উক্ত মসজিদ কমিটিতে এলাকায় মুজিবুর রহমান স্বপন পাটোয়ারীকে সভাপতি করতে হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখে।
এ ব্যপারে মাদ্রাসার উপদেষ্টা মোঃ মানিক মুন্সী জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, অভিভাবক ও প্রধান উপদেষ্টার মতামতের তোয়াক্কা না করে স্বপন পাটোয়ারীকে সভাপতি ও ফিরোজ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি দেয়া হয়। আল্লাহর ঘর মসজিদ ও মাদ্রাসা নিয়ে সংঘর্ষ, হামলা ও মামলার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।
ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক ও মাদ্রাসা-মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ফরহাদ কাজী জানান, আমি ঢাকায় আছি। মাদ্রাসাটির সমস্যা নিরসনে আমাকে প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিটির আহবায়ক করা হয়। কিন্তু আমি লোক মারফত খবর পেয়েছি আমাকে ছাড়াই বা আমার কোন মতামত না নিয়েই কিছু লোক গোপনে মসজিদ কমিটি গঠন করেছেন। আমি ঢাকা থেকে আসার পর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।
এ ব্যপারে মোঃ হুমায়ুন কবীর জানান, আমাকে কেন আপনি ফোন করলেন? আমিতো এ ব্যপারে কিছুই জানিনা। আমিও অন্যদের মতো সাধারণ একজন মুসুল্লী। আর ফরহাদ কাজী মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি সে মসজিদ কমিটির কিছুই না। আর মসজিদ কমিটির বয়স বর্তমানে ১ বছর। আমি রায়পুরে রয়েছি। আমি এখন জোহরের নামাজে যাচ্ছি। আপনার দরকার হলে পরে আবার কল দিয়েন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, মাদ্রাসা ও মসজিদ কমিটির সমস্যা নিরসন ও হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে থানায়। তদন্ত চলছে। আর কমিটি গঠন নিয়ে আমি কিছুই জানি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।