নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত মাসের ৯ সেপ্টেম্বর সকালে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার টীকার ২য় ডোজ নিতে আসেন রামগঞ্জ পৌর সাতারপাড়া গ্রামের পালের বাড়ীর মনোয়ার বেগম (৫০)। সিরিয়ালে দাঁড়ানো অবস্থাতেই হটাৎ গলায় টান পড়ে মনোয়ারা বেগমের। চিৎকার দিয়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন উনার সোয়া ১ ভরি ওজনের সোনার চেইনটি গায়েব। চারদিকে খোঁজ নেয়া হলেও মুহুর্তের মধ্যেই লাপাত্তা ছিনতাইকারী। কোনভাবেই উদ্ধার করা যায়নি সোনার চেইন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দেয়ার পরও কোন সমাধান না পেয়ে চোঁখে অশ্রু নিয়ে টিকা গ্রহণ না করে বাড়ী ফিরে যান মনোয়ারা বেগম।
একই তারিখে পশ্চিম টামটা গ্রামের সাহান আরা বেগমের গলা থেকেও নিয়ে যায় ১ ভরি ওজনের বিদেশী সোনার চেইন। একের পর ঘটতে থাকে সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনা। তারপরও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেয়নি কোন বিহিত ব্যবস্থা।
একের পর এক অভিযোগ পেয়েও কর্তৃপক্ষের নিস্কৃয়তা আর কোন ধরনের সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা না করায় বিগত তিনমাসে শতাধীক সোনার চেইন চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতারা।
উপজেলার সাহারপাড়া পুরাতন বাড়ীর আজাদ হোসেনের স্ত্রী মিনু বেগম জানান, আগষ্ট মাসে তিনি রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে সিরিয়ালে দাঁড়ান হটাৎ করেই তার গলা থেকে ১২আনা ওজনের বিদেশী সোনার চেইনটি টান দিয়ে নিয়ে যায় এক মহিলা। এসময় ছিনতাইকারী মহিলাকে আটক করে শরীরে ব্যাপক তল্লাশী করলেও বের করতে পারেনি চুরি যাওয়া সোনার চেইনটি। একই অভিযোগ করেন, পৌর আঙ্গারপাড়া গ্রামের প্রফেসর তোফায়েল আহম্মেদের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার সনেট। তার গলা থেকেও ছিনিয়ে নেয়া হয় একটি সোনার নেকলেস।
তবে শেষ রক্ষা হলো না। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডাক্তার দেখাতে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের পাঁচরুখি গ্রামের চাঁন মিয়া ব্যাপারী বাড়ীর লোকমান হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। সিরিয়ালে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই হটাৎ তার গলায় থাকা সোনার চেইনটিতে টান পড়ে।
চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে অন্য রোগীরাসহ ঘেরাও করে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকার ধরম-ল গ্রামের আনোয়ার বেগম লাকী (২৫) নামের মহিলা ছিনতাইকারীকে আটক করে। এসময় ছিনতাইকৃত সোনার চেইনটি তার থেকে উদ্ধার করে মহিলারা। পরে তাকে রামগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়।
এদিকে সোনার চেইন ছিনতাইকারী মহিলা আটকের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী ছুটে আসেন রামগঞ্জ থানায়।
রামগঞ্জ থানায় আসা বিষ্ণবল্লভপুর গ্রামের শাহনাজ আক্তার সুমী জানান, তিনি কয়েকদিন সরকারী হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় নবজাতক শিশুকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে সিরিয়াল দিতে গিয়ে একই কায়দায় খোঁয়ান তার ৮আনা ওজনের সোনার চেইনটি।
৩০ সেপ্টেম্বর নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত কালা মিয়ার স্ত্রী শহিদা বেগম আসেন করোনার টিকা গ্রহণ করতে। এসময় তার গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের একটি সোনার চেইন গলা থেকে টান দিয়ে লাপাত্তা ছিনতাকাইকারী। প্রায় ১ভরি ওজনের সোনার চেইন একইভাবে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নোয়াগাঁও গ্রামের মোল্লাবাড়ীর রেজাউল করীমের স্ত্রী রুমান আক্তার। তিনি ডাক্তার নাজমুল হকের কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন।
পূর্ব বিঘা বানবাড়ীর আবদুর রশিদের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বেগম। ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ডাক্তার দেখাতে এসে খোঁয়ান সোয়া ১ ভরি ওজনের একটি বিদেশী সোনার চেইন।
টিকা নিতে আসেন পানপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী চবুরা খাতুন। সিরিয়ালে দাঁড়ানো অবস্থাতেই গলা থেকে টান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় দেড় ভরি ওজনের বিদেশী সোনার চেইন।
একই অভিযোগ করেন নোয়াগাঁও দেওয়ান বাড়ীর আবুল কালামের স্ত্রী জাহানারা বেগম। তার গলা থেকেও ছিনিয়ে নেয়া হয় ১ ভরি ওজনের সোনার চেইনটি।
এ ব্যপারে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার গুনময় পোদ্দার জানান, আমরা ছিনতাইরোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আরো আগে কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি, এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন করোনাকালীন সময়ে ব্যস্ত থাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে বিলম্ব হয়।
রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক তাজুল ইসলাম জানান, আমরা গঠনাস্থল থেকে ছিনতাইকারী মহিলাকে আটক করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর একবার এক নাম ব্যবহার করায় কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। পরে আমরা ব্রাহ্মনবাড়িয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি।
রামগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ জহিরুল আলম জানান, সরকারী হসপিটালে রোগীদের সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনায় আনোয়ারা বেগম লাকী নামের একজন মহিলাকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।