মাহমুদ ফারুক: আমার ছেলে বড় হয়ে জজ হতো, অনেক বড় বিচারক হতো। কিন্তু আমার স্বপ্ন, আমার ছেলের স্বপ্নকে গাড়ী চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বুক খালি করেছে, বাবার লাশ সন্তানের কাঁধে থাকলেও আজ আমার ছেলের লাশ আমাকে বহন করতে হয়েছে। এ বোঁঝা অনেক ভারী, হে আল্লাহ আমাকে ধৈর্যধারণ করার তওফিক দান করো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার ঢাকার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ বহনকারী গাড়ী চাপায় নিহত নাঈম হাসানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স নায়ক শাহ আলম দেওয়ান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রামগঞ্জ উপজেলার কাজীরখীল গ্রামের দেওয়ান বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা নটরডেম কলেজ ছাত্র নাঈম হাসানের মামা কুমিল্লা সরকারী মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারুক আহম্মেদ ও রামগঞ্জ সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফরিদ আহম্মেদ জানান, খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন নাঈম হাসান (১৮)। ছোট বেলা থেকে নাঈম হাসানের ঢাকায় বেড়ে ওঠা। দুই ভাই মুনতাসির মামুন শাহরিয়ার ও নাঈম হাসান ছোট বেলা থেকেই মা বাবার সাথে ঢাকা বসবাস।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও একই বাড়ীর নাঈম হাসানের চাচা দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু জানান, মেধাবী হওয়ার কারনে নাঈম হাসানকে ঢাকা থেকে এনে পূর্ব কাজীরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাই। ঐ বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে সর্ব্বোচ্ছ মার্ক পেয়ে জিপিএ ৫ অর্জন করে। খুব হাসিখুশি ছেলেটিকে আজ কবরে দিয়ে আসলাম।
নাঈম হাসানের বাবা শাহ আলম আরো জানান, আমি সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করার পর ঢাকার নীলক্ষেতে সৈনিক বুক সেন্টার দিয়ে বইয়ের ব্যাবসা করে আসছি। দীর্ঘদিন ঢাকার কামরাঙ্গির চরের ঝাউলাহাঁটি এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করে আসছি। আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস একজন গৃহিনী। গাড়ী চাপায় আমার ছেলে নাঈম হাসান মারাত্মক আহত হলে সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্ধায় ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টায় আমি বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করি। এর পুর্বে স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় পুলিশ গাড়ী চালক রাসেল মিয়াকে আটক করে। গাড়ী চালকের কোন লাইসেন্স ছিলো না- সে কোন গাড়ীর চালকও নয়। তাকে ভাড়া করে আনা হয়েছে।
নাঈম হাসানের মামা ফারুক আহম্মেদ জানান, কামরাঙ্গির চর ঝাউলাহাঁটি শাহী জামে মসজিদের সামনে নাঈম হাসানের জানাজা শেষে রাত ২টায় আমরা তার নানার বাড়ী রামগঞ্জ উপজেলার সমেষপুর মিঝি বাড়ীতে নিয়ে যাই। সেখানে দোয়ার অনুষ্ঠান শেষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ী কাজীরখীল গ্রামের দেওয়ান বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এসময় তিনি গুলিস্তানের যে স্থানে আমার ভাগিনা নাঈম হাসান গাড়ী চাপায় মারা যায় সেখানে একটি স্মৃতি ফলক ও নটরডেম কলেজেও একটি ফলক নির্মানের দাবী জানান।