মাহমুদ ফারুক: ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা, আন্তরিকতা আর ভালোবাসার টানে যেন বাবার ভিটিতে ফিরে আসা। গ্রামের কাদামাটি আর শৈশব যেন বার বার ডেকে বলে ফিরে আয় বাপ। বাবা মা, আর নিকটাত্মীয়রা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন বহু আগেই। অন্তরাত্মা জেগে ওঠে, মায়া মমতা, শৈশব, কৈশোর যেন গুমরে কেঁেদ উঠে নিজের আপন ঠিকানায় ফিরে যেতে।
জীবন আর জীবিকার তাগিদে শহরের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে সমাজের উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বাসনা থাকলেও এ যেন দিনশেষে নাড়ীর টানে বাড়ী ফেরা। সপ্তাহের অন্তত একটি দিনের কিছু মুহুর্ত শহরের কোলাহল ছেড়ে বাবার ভিটিতে ফিরে আসা যেন দু’ হাতে চন্দ্র পাওয়া। স্থানকাল পাত্রভেদে সবাইকেই ফিরতে হয় আপন ঠিকানায়। নিজ গ্রাম, বাবা মায়ের কোল, কারো বা বাবা মায়ের কবরের পাশে শায়িত হওয়ার বাসনা অস্থির করে দেয় জীবনের অন্তিম বা কোন কোন মুহুর্তে।

বাড়ীর বড়দের প্রতি সম্মান, ছোটদের না দেখা আর ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়লে বুকটা হু হু করে ওঠে। এমনি এক মুহুর্তে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আত্মীয়দের একত্র করতে পরিশ্রম করেছেন বিগত কয়েকমাস। অবশেষে দিনক্ষন ঠিক করে বছরের শেষ দিনটি আজ ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার নির্ধারণ করা হয়। এদিনে সবাই একত্র হবেন বা আত্মীয়দের কেউ কেউ যুগের পর যুগ একত্র হয়েছেন। সবাই সবাইকে কাছে পেয়ে হাসি-কান্না আর আবেগাপ্লুত। অতীরের ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ও বিভেদ ভুলে আলিঙ্গন করছেন একে অন্যকে। শিশুরাও গ্রামের পরিবেশে মাটি-বালিতে গড়াগড়ি আর আনন্দে মশগুল। অন্যদিকে মঞ্চে চলছে ছোটদের কবিতা, ছড়া, গজল ও বড়দের বালিশ খেলাসহ সামাজিক বিভিন্ন প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠান।
একদিকে বছরের শেষ দিন, অন্যদিকে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কারো মধ্যে কোন ব্যস্ততার ছিটেফোটাও দেখা যায়নি।
বলছি রামগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাইনাল ভূইয়া বাড়ীর কথা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাবা মায়ের পুর্ব পুরুষদের কথা এতদিন মুখে শুনে এসেছেন, আজ অনেকে তা স্বচক্ষে দেখে নিজেদের কৃতার্থ মনে করছেন।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর যখন সবাই পিকনিকের আয়োজনে খাবার শেষে ব্যস্ত সময় পার করছেন এমনি সময়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা হাজির অনুষ্ঠানস্থলে। শুরু হয় স্মৃতিচারন আর বাড়ীর বয়োজেষ্টদের আবেগঘন আলোচনা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিও অবাক তাদের কথা শুনে, আয়োজন দেখে।
এসময় প্রধান অতিথি তাপ্তি চাকমা তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, যেখানে আমরা পরিবারের গুটি কয়েকজন মানুষকের সময় দিতেও পারিনা কর্তব্য আর ব্যস্ততার কারনে। সেখানে এ বাড়ীর এতগুলো মানুষ একত্র হয়ে এত সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। তিনি ভ্রাতৃত্ববোধের এমন নজীর ধরে রাখার জন্য বর্তমান প্রজন্মকে অনুরোধ করে সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় বক্তব্য রাখেন, ডাক্তার নজরুল ইসলাম ভূইয়া, ফিরোজ আলম ভূইয়া (এফসিএ), হারুন অর রশিদ ভূইয়া, সৈয়দ আহম্মদ ভূইয়া, নুর মোহাম্মদ ভূইয়া, সাইফুল আরেফিন ভূইা ও মহি উদ্দিন ভূইয়া প্রমূখ।