মাহমুদ ফারুক: মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মে। পরিবার, বাড়ী, গ্রাম, এলাকা, উপজেলা এবং জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্টি বা অসহায়দের জন্য যারা নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
নিজ নিজ অবস্থানে থেকেও যে ভালো কিছু করা সম্ভব, দেশের জন্য-দশের জন্য-গরীব অসহায় মানুষের জন্য তার অন্যতম দৃষ্টান্ত রামগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দানবীর ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ ভুইয়া। যাকে এক নামে চিনেন রামগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর-চাটখিল-নোয়াখালী, শাহরাস্তি বা দেশের মানবিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ। গরীব অসহায়দের জন্য যার অবদান নিজের চোখে না দেখলে বোধগম্য হওয়ার কথা না। অনেকটা আড়ালে থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া ফরিদ আহমেদ ভুইয়ার অন্যতম ভ্রতই বলা চলে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ ভুইয়া তার মানবিক কাজকর্মে নিজেকে জাহির করার জন্য কখনো প্রচার প্রচারনা চালাননি। নিজ অবস্থান থেকে সবসময়ই চেষ্টা করেছেন, কিভাবে অসহায় মানুষগুলো আরো ভালো থাকবেন। কি ধরনের কাজে মানুষের দীর্ঘমেয়াদী উপকার হবে, কিভাবে এ দেশের মানুষ শিক্ষা, অন্ন, বাসস্থানের আরো সুবিধা পাবেন। পীড়িত করতো মানুষের কষ্টগুলো নিজ চোখে দেখে। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য যিনি রামগঞ্জ ও চাটখিল উপজেলার আনাছে কানাছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন দুই হাতের বন্ধন খুলে।
একজন শিক্ষানুরাগী হিসাবে নিজ গ্রাম লামনগর একাডেমী, উদয়পর হাফেজিয়া নূরানী তালিমূল কোরআন মাদ্রাসা, রামগঞ্জ মডেল বিশ^বিদ্যালয় কলেজ, দল্টা ডিগ্রি কলেজ, কচুয়া ফাজিল মাদ্রাসা, দশঘরিয়া পরকোট উচ্চ বিদ্যালয়, জামেয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসাসহ রামগঞ্জ ও চাটখিল উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানার প্রধান পৃষ্টপোষক। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ফরিদ আহমেদ ভুইয়ার অনুদানে নির্মিত শ্রেণিকক্ষ, মিলনায়তন।
বিশিষ্ট সমাজসেবক ফরিদ আহমেদ ভুইয়া সমাজসেবার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মানুষের উপকার করতে হলে উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা বা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া লাগেনা। মহৎ উদ্দেশ্য ও আন্তরিকতা থাকলেই সমাজের দরিদ্রপীড়িত মানুষের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব।
করোনার শুরু থেকে সারাদেশের মানুষ যখন মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত, করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে পড়তে হতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। সে দুঃসময়ে, দেশের মানুষের এমন ক্রান্তিকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ ভুইয়া রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজ অর্থায়নে স্থাপন করেছেন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা (সেন্ট্রাল অক্সিজেন), রামগঞ্জ উপজেলার অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা, পিপিই, মাস্ক, গামবুট, রেইনকোট, অক্সি কনসানট্রেটর মেশিন প্রদানসহ অক্সিজেন সেবাসহ করোনা উপসর্গে মৃতদেহের দাফনে যার অবদান প্রশংসার দাবী রাখে। এছাড়া তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাজে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করছেন।
এত মানবিক কার্যক্রমের পরেও যিনি নিজেকে সবসময় রেখেছেন আড়ালে।
প্রচার বিমুখ এ মানুষটির জন্ম ১৯৫২ ইং সনে রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের স্বনামধন্য ভুইয়া পরিবারে। ছাত্র জীবন থেকে তিনি পাকিস্তানি অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন স্বোচ্ছার ও আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন শোষিত মানুষের পক্ষে।
১৯৭৫ইং সনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসায় নেমে পড়েন। বর্তমানে তিনি আরপি গ্রুপ বহুমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের এমডি। দেশের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও করদাতা হিসাবে বাংলাদেশ সরকারের ভিআইপি ও পরবর্তিতে সিআইপি মর্যাদার সন্মানে ভূষিত হন।
মরহুম পিতা ডাঃ মফিজ উদ্দিন ভুইয়া ও মাতা রহিমা খাতুন। ভাই বোনদের সকলেই স্ব স্ব অবস্থানে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত। সহধর্মিনী ডাক্তার তাজকেরা খানম জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহকারী সার্জন। তিনি দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
শিক্ষানুরাগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ ভুইয়া ব্যবসা জীবনের অর্জিত বেশিরভাগ অর্থ দিয়ে ২০১৭ ইং সনে নিজ গ্রাম উদয়পুর গ্রামে ৩৫ একর ভূমিতে দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় রেখে আধুনিক আবাসিক ব্যবস্থাসহ শিক্ষার মান ও শিক্ষার সকল সুযোগ সুবিধা বজায় রেখে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদ আহমেদ ভুইয়া একাডেমী। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাত্র কয়েকদিনেই রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর এবং বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার মধ্যে পরিক্ষার ফলাফল ও লেখাপড়ার পরিবেশগত দিক থেকে শ্রেষ্টত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমেদ ভুইয়া জানান, শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে তার সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রয়েছে। যেভাবে ১৯৭১ইং সনের স্বাধীনতা যুদ্ধে শোষনহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।
