নিজস্ব প্রতিবেদক: অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, তার উপর লক্কড়ঝক্কড় লেগুনা গাড়ীতে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে রামগঞ্জ-ভাটরা সড়কের কয়েক হাজার যাত্রীগণকে।
দূর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভাটরা থেকে ১০ কিলোমিটার দুরের রামগঞ্জ বাজারে আসা যাওয়া করে আসছেন দল্টা, ভাটরা, খোদ্দনগর, বাউরখাড়া, টিউরি, ভোলাকোট, লক্ষ্মীধরপাড়া, বিষ্ণুপুর, দেহলা, আথাকরাসহ তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।
ভাটরা বাজারের মুদী ব্যবসায়ী আবু সালেম জানান, প্রায় রামগঞ্জে যেতে হয়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক হাঁট বসার আগের দুইদিন মালামাল আনতে হয় রামগঞ্জ শহর থেকে। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। তিনি এসময় অল্প বয়সী কোন বাচ্চা ছেলেকে চালকের আসনে দেখলে লেগুনা গাড়ীতে উঠেন না বলেও জানান। তিনি সড়কগুলোর দৈন্যদশার কথাও বলেন।
রামগঞ্জ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেলা শাহনাজ ও রামগঞ্জ সরকারী কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী আবু নোমান রানা জানান, কলেজ চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ টাকা দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। এত দুরের পথ লেগুনা ছাড়া বিকল্প নেই। অধিকাংশ চালকই আমাদের থেকে বয়সে অনেক ছোট। কিছু কিছু চালক আবার বেপরোয়া গতিতেও গাড়ী চালায়। একদিকে সড়কগুলোর বেহালদশা অন্যদিকে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ীর কারনে ব্যাথায় পুরো কাহিল হয়ে পড়ি।
ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ করার শর্তে জানান, এ সড়কে আগে সিএনজি বা ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা চলতো। লেগুনার কারনে সে সব গাড়ী খুব একটা দেখা যায় না। অধিকাংশ লেগুনার চালকের বয়স ১৫/১৬ বছর। এসব চালকের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই, নেই কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা। ফলে এই সড়কের যাত্রি সাধারণ কে প্রতিনিয়তই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০/১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে।
কথা হয় কয়েকজন লেগুনার যাত্রীর সাথেও। নাসরিন আক্তার, শেফালি বেগম, আঃ রহিম, রফিক মিয়াসহ অনেকেই জানান, এই লেগুনা গাড়ী গুলো দিয়ে চলাফেরা করতে আমাদের অনেক ভয় লাগে, কিন্তু কি করব অন্য কোন যানবাহন না থাকায় আমরা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সব গাড়িতে চলাফেরা করছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের কথা বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।
লেগুনা চালক আরিফ হোসেন জানান, কি করবো বলেন। করোনার বন্ধের সময় গাড়ী চালানো শিখেছি, এছাড়া অন্য কোন কাজ শিখি নাই। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে হেসে উত্তর দেন, ভাই এ সড়কে কারোই ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। আর তাছাড়া আমি কয়দিন পর বিদেশে চলে যাবো, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি। এসময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আমার পুরো পরিবার আমার উপর ভরসা করে আছে। একবেলা না খেতে পারলে, আপনি কি খাবার দিবেন?
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, ভাই আমি মাত্র কয়েকদিন আগে শপথ গ্রহণ করে চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার নেই। এখনো আমি জানিনা এ সড়কগুলোতে কি ধরনের গাড়ী চলাচল করে। আর কার অনুমতি নিয়ে এ সড়কে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ী চলাচল বা অল্প বয়সী চালক কিভাবে গাড়ী চালায় তা আমি এ মুহুর্তে বলতে পারছি না।
লক্ষ্মীপুর ট্রাপিক পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল আলম জানান, আমি রামগঞ্জে আসলে বিষয়টি দেখবো। অল্প বয়সী চালকদের ব্যপারে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জানান, এ সড়কগুলোতে যে লেগুনা চলে আমি তা অবগত নই। তবে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো যেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কেউ এ পেশায় যুক্ত না থাকে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যপারেও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।