নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংসারে উপার্জনের অবলম্বন অটোরিকশা চুরি যাওয়ায় কিশোর ইয়াছিনের কান্না যেন থামছিলো না। ভাড়াকরা অটোরিকশার শোকে কাতর ছিল লক্ষ্মীপুরের ইয়াছিন।
বাংলানিউজসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তার পরিবারকে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (মিশুক) কিনে উপহার দেয় ঢাকার বেসরকারি সংস্থা ‘প্রজেক্টস ফর হিউম্যানিটি (পিফরএইচ)’।
স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮ টার দিকে রিকশাটি ইয়াছিনে মা ফেন্সী আক্তারের কাছে হন্তান্তর করা হয়।
রিকশা হস্তান্তরের সময় লক্ষ্মীপুর সদরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোতাহের আলী ও সাংবাদিক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, মাহমুদ ফারুক, মো. নিজাম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন রাফি, রুবেল হোসেন, জুনাইদ আল হাবিব এবং রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান পাবেল।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের পলোয়ান মসজিদের কাছ থেকে কিশোর ইয়াছিনের অটোরিকশাটি চুরি হয়। এসময় সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ঘটনাটি এবং ইয়াছিনের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে প্রথম বাংলানিউজে ‘মুহুর্তেই উধাও অটোরিকশা, কান্নায় ভেঙে পড়লো কিশোর চালক’ শিরোনামে ইয়াছিনের কানাকাটির ছবি দিয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমেও খবরটি প্রচার হলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। বিভিন্ন সংস্থা এবং লোকজন তাকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসে।
‘রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার”স ক্লাব’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়াছিনের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে।
এছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই ফোন করে ইয়াসিনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
ইয়াছিন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরভুতা গ্রামের বাসিন্দা।
ইয়াছিন জানায়, পরিবারের অভাবের তাড়নায় সে ১৪ বছর বয়সে অটোরিকশার হ্যান্ডেল হাতে নিয়েছে। তার বাবা চার বিয়ে করেছে। গত দুই বছর থেকে তাদের কোন খোঁজ রাখেনা বাবা ইব্রাহিম। তার তিন বোন ও মাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে সে। ৯ মাস আগে তার ছোট ভাইটি ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
তার চিকিৎসা করাতে পরিবারের অনেক ঋণ করতে হয়েছে। ধার-দেনা এবং দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সে গত দেড় মাস আগ থেকে ভাড়ায় একটি অটোরিকশা চালানে শুরু করে। দিনে তিনশ টাকা ভাড়া দিতে হতো মালিককে। বাকী দুইশ বা তিনশ’ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলতো।
গত ৬ ফ্রেব্রুয়ারি বেলা ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে জেলা শহরে আসার জন্য দুইজন যাত্রী তার অটোরিকশায় উঠে। কয়েক ঘণ্টা বিভিন্নস্থান ঘুরিয়ে পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় এনে সুযোগ বুঝে তার অটোরিকশাটি নিয়ে উধাও হয়ে যায় যাত্রীবেশী ওই দুই চোর।
সে জানায়, অটোরিকশাটি চুরি যাওয়ায় তার মালিক তাকে জরিমানার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বনটি হারিয়ে সংসারের চাকা বন্ধ হয়ে গেছিলো।
তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিভিন্নস্থান থেকে তার খোঁজ খবর নিচ্ছে অনেকে। থানা পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা তার অটোরিকশা এবং চোরদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে।
রিকশা উপহার পেয়ে ইয়াছিনের মা ফেন্সি আক্তার বলেন, আমরা অসহায়। অভাবের কোন মতো খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। ছেলেকেও লেখাপড়া করাতে পারিনি। এখন বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন হলো। এজন্য সাংবাদিক ও রিকশাদানকারী সংগঠনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ভবানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বলেন, পরিবারটি খুব অসহায়। পরিষদের পক্ষ থেকে তাদেরকে কিছু সহযোগিতা করা হবে।