মাহমুদ ফারুক: আপনারা বাজারে গেলে বিক্রেতা বা সরকারকে কিছু বলতে পারেন, আমরা তাও পারিনা। মুখ বুঝে সহ্য করি। বিক্রেতারা যাই বলে, সে দামেই কিনতে বাধ্য হই। কোন কথা মুখ দিয়ে বের হয় না, লজ্জা পাই।
বাজারে জিনিসপত্রে দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ সরকারকে ইঙ্গিত করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে। আমরা কাকে বলবো। উপরে থুথু ফেললে নিজের গায়ে পড়ে।
কথাগুলো নির্দ্বিধায় জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামগঞ্জ বাজারের একজন রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা।
তিনি এসময় বলেন, সাধারণ মানুষ সরকারকে অনেক কিছুই বলতে পারেন। আমরা পারি না। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় আমরা সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে গেছি সরকারী লোক।
কিন্তু ভাই, একদিকে রড সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাবিক্রিও নাই। করোনার দুই বছরে পথের ফকির হয়ে গেছি। এখন এক কেজি করলা কিনতে গিয়ে বেহুশ হই।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রামগঞ্জ মাছ ও কাঁচা বাজারে গিয়ে কথা হয় এ ভদ্রলোকের সাথে। কথা হয় বেশ কিছু ক্রেতার সাথেও।
স্কুল শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা মাসে কত বেতন পাই? পরিবারের ৭ সদস্যের তিনবেলার মাছ তরকারী কিনতে প্রতিদিন গুনতে হয় ৭শ থেকে ১ হাজার টাকা। কে শুনবে আমাদের কথা। এসময় তিনি জানান, পাকাবাড়ী নির্মানের সময় লোন নিয়েছি ব্যাংক থেকে। লোনের টাকা ব্যাংক কেটে রাখে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয়না।
কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ ইমাম হোসেন স্বপন জানান, মানুষের ভিতরে হাহাকার চলছে। খেতে পারেনা, জামা কাপড় কিনবে কি দিয়ে। দিনের পর দিন দোকানে এক টাকাও বিক্রি হয়নি। বাহিরে থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই কিভাবে চলছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বেশি। সে তুলনায় মানুষের রোজগার তো বাড়েনি।
সরেজমিনে রামগঞ্জ মাছ ও কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, করলা কেজি প্রতি ১২০, কুমড়া ৩৫, কচুর চড়া ৪০, ধনেপাতা ১শ, টমেটো ৪০, মুলা ৩০, বেগুন ৬০, ফুলকপি ৫০, তরি ৬০, গাজর ৪০, শশা ৬০, পাতাকপি প্রতি পিস ৫০, শীমের বিচি ১২০, লাল শাক ৫০, কাঁচা মরিছ ৮০, কলার হালি (ছোট) ৫০, লেবুর হালি (ছোট) ৬০ টাকা ও কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া হাঁড়ছাড়া গরুর গোস্ত ৭শ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৫০-১৫৫, ককমুরগী ২৭০-২৯০ টাকা কেজি ও ছোট রুই মাছ ২৭০ টাকা কেজি, পেয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ ও সয়াবিন তেল কেজি ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
তরিতরকারী বিক্রেতা আরিফ হোসেন জানান, মহাজনের গদিতে বাজারের প্রতিটি দোকানদার লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা। ১৫টি আড়তদার প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য। এক আড়ত মালিক পাবেন ৯৪ হাজার টাকা। উনাকে আজ দিয়েছি ১ হাজার টাকা। প্রতিদিনই দেনার বোঝা বাড়ছে।
রামগঞ্জ বাজারের কাঁচা তরকারীর পাইকারী বিক্রেতা সুমা ভান্ডারের পরিচালক রাশেদ কাজী জানান, আমাদের অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার কুমিল্লার নিমসার। সেখানে বাজার দরের উঠা নামার কারনে আমাদের এলাকায় তরকারী বিক্রি করা হয়।
এসময় তিনি আরো জানান, গত তিনমাসে বেশ কয়েকবার টানা বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারনে তরি-তরকারীসহ ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন রোপনকৃত গাছে এখনো ফসল আসেনি। যার কারনে বাজার এখনো থমকে আছে।