নিজস্ব প্রতিবেদক:
হ্যালো, আজ কি কেউ নামবে ? অপরপ্রান্তের কথা বুঝা না গেলেও ফোনদাতা মনে হলো কিছুটা আশ^স্ত হলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে সোনাপুর চৌরাস্তার একটি চা দোকানে ফোনদাতার পাশে দাঁড়িয়ে মনে হলো, যেহেতু উপজেলাব্যপি ট্রলি বন্ধ ঘোষণা করেছেন স্থানীয় সাংসদ ড. আনোয়ার হোসেন খাঁন। এতে করে ট্রলি মালিক ও চালকরা নিয়েছেন কৌশলের আশ্রয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কখন মাঠে নামবেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। তার খবর আগেই পেয়ে যাচ্ছেন ট্রলি মালিক সমিতির লোকজন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ট্রলি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে এক সড়কে আর ভীন্ন সড়কে অবাধে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ট্রলি। চিত্রটি আজ মঙ্গলবার উপজেলা শহর ঘুরে দেখা যায়। ফলে স্থানীয় লোকজন ট্রলি চলাচলে হাসি তামাসা করছেন বলেও দেখা যায়।

জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামগঞ্জ আসনের সাংসদ ড. আনোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, ট্রলির দানবীয় চাকার কারনে সদ্য নির্মিত সড়কগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। মাটি বা ইট বোঝাই করে জমি থেকে মূল সড়কে উঠতে গিয়ে ট্রলির মাঝখানের বড় বড় চাকার কারনে সড়কের পাশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে করে সরকারী বরাদ্ধে নির্মিত কোটি কোটি টাকার রাস্তার চরম ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনাও। এসময় তিনি চাষাবাদের জমি নিয়েও ট্রলি মালিক সমিতির লোকদের অনুরোধ করেন, যেন জমিতে ট্রলি না নামায়। চাষাবাদ যেন ট্রলি কারনে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
ট্রলি চলাচলে নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন। দফায় দফায় চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।
তিনদিনের অভিযানে নগদ দুই লাখ ২৪ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০টি মামলা দায়ের করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ।

১ মার্চ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মনির হোসেন রানাকে জমির টপ সয়েল বিক্রির অপরাধে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা, দুইটি ট্রলি মালিকের ৩০ হাজার টাকা ও ৩টি মামলা, ৩ মার্চ দুই ট্রলি মালিকের ৩২ হাজার টাকাসহ ৩টি মামলা ও ৮ মার্চ ৪টি মামলাসহ ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন।
দফায় দফায় জরিমানা করার পরও কিভাবে সড়কে অবাধে চলছে ট্রলির মতো নিষিদ্ধ মালবাহী বাহনটি তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন অনেকেই।
রামগঞ্জ মডেল বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম জানান, রাস্তায় চলা যায় না। একদিকে ভাঙ্গা রাস্তা অন্যদিকে বেপরোয়া গতির এসব ট্রলির কারনে ধুলোয় ধুসর হয়ে থাকে চারদিক। এছাড়া বেপরোয়া গতির কারনে আমরা আতঙ্কে থাকি দূর্ঘটনার ভয়ে।
ট্রলি চালক রাসেল মিয়া জানান, যত দোষ ট্রলি চালক ও মালিকদের। রাস্তাঘাটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ড্রাম ট্রাকের কারনে। আর আমরা শিখেছি ট্রলি চালানো। কয়েকশ ট্রলি মালিক ও চালকদের সাথে হাজার হাজার মানুষের রিজিক। আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা করে দিলে আর ট্রলি চালাবো না।
উপজেলা ট্রলি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন জানান, আমরা লাখ লাখ টাকা খরছ করে ট্রলি কিনেছি। বছরের পর বছর তা চলছে। ট্রলিতে মালামাল আনা নেয়ার খরছ কম হওয়ায় এলাকার লোকজনও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের সদস্যরাও দুই বেলা খেতে পারছেন। এসময় তিনি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ব্যপারে কোন নির্দেশনা জানেন না বলেও দাবী করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা খাতুন জানান, মাসিক আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কোন ধরনের ট্রলি চলাচল করতে পারবে না। আর যেহেতু এসব ট্রলির বৈধ কোন কাগজপত্র নেই সেহেতু ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ট্রলি চালক ও মালিকদের জরিমানার পাশাপাশি জেল দেয়ার বিধান রয়েছে। এসময় তিনি ট্রলি বা অবৈধ বাহন চলাচলে কঠোর নির্দেশনার বিষয়েও কথা বলেন।