মাহমুদ ফারুক:
রামগঞ্জ উপজেলায় হীরা-২ হাইব্রিড ধান চাষ করে কপাল পুড়েছে ধান চাষীদের। সুপ্রীম সীড কোম্পানীর এ ধান গাছের খর্বকায় আকৃতি ও অপরিপক্ক অবস্থায় আগাম ধানের শীষ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গাছের শাখা-প্রশাখাও গজায়নি।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ বছর তাঁরা চকচকে ‘মানহীন’ এ ভেজাল ধান চাষ করে হতাশ। এজন্য কোম্পানীর কাছে তাঁরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৭ ও ৮ মার্চ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব ও কীটতত্ত্ব বিভাগের দুইজন অধ্যাপক এবং ধান বীজ সরবরাহকারী কোম্পানীর প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ চাষাবাদকৃত জমির ধান গাছ ও ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ধানের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে কৃষক ও বীজ ডিলারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবু আশরাফ খান ও কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর বরাবর মাঠ পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপ্রীম সীড হীরা ধানের জাতে গোছাগুলি খর্বাকৃতিতে কুশীর সংখ্যার স্বল্পতা, পাতা মোড়ানো ও ক্ষেত্র বিশেষ হলুদ বর্ণের দেখা গেছে। গাছগুলো যথাযথ বৃদ্ধি পায়নি, কোন-কোনটি বাদামী আকার ধারণ করেছে। ভাইরাস সংক্রমন বা বিশেষ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির কারণে ধান গাছগুলো এমন হতে পারে বলে ধারণা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশপাশের এলাকাগুলোতে কয়েক বছর ধরে কৃষকরা হীরা-২ হাইব্রিড ধান চাষ করছেন। এ বছর শুধু রামগঞ্জেই ৫ শতাধিক কৃষক এ ধান চাষ করেছেন। বাজারে ৪০ কেজি বস্তা ১২ হাজার ও এক কেজির প্যাকেট বিক্রি হয় ৩০০ টাকা দরে। বাজারে এ ধান বীজের চাহিদাও রয়েছে।
এ বীজের বিষয়ে ভাটরা ইউনিয়নের নান্দিয়ারা গ্রামের কৃষক নুর নবী, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিন নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মিহীর চন্দ্র দেবনাথ, ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের কৃষক সিরাজ মিয়া ও দরবেশপুর গ্রামের হারুনসহ অন্তত ৮ জন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়।
তাঁদের অভিযোগ, সঠিক পরিচর্যার পরও ধানগাছ কোনোটি ছোট, কোনোটি লম্বা আকার ধারণ করেছে। কিছু গাছে আগাম শীষ দেখা দিয়েছে। আবার অনেকগুলোর শাখা-প্রশাখাও গজায়নি। অথচ পাশের জমিতে অন্য জাতের বোনা ধান বীজের গাছগুলো স্বাভাবিক রয়েছে। এ বছর মানহীন বীজের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে তাঁরা দাবী করেন।
ভাদুরের সমেষপুর গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, আমি হীরা ধানের বীজ কিনে ৪৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করছি। সময়মতো পরিচর্যাও করেছি। এখন ক্ষেত দেখে আমার মরণদশা। শুধু আমার না, শত-শত কৃষকের একই অবস্থা।
কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, বেশী ফলনের আশায় ৬০ শতাংশ জমিতে ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এ ধান চাষ করেছি। ক্ষেতের অবস্থা দেখে এখন রাতে ঘুমও হয় না। আমরা বীজ কোম্পানীর কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।
রামগঞ্জের বাবুল বীজ ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী বাবুল মিয়া জানান, প্রতিদিনই কৃষকরা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। হয়তো বাজারে হীরা ধানবীজের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এবার গুণগতমান ঠিক রাখতে পারেনি।
সুপ্রীম সীড কোম্পানী মার্কেটিং অফিসার মো. ইসমাইল হোসেন জানান, রামগঞ্জে এ বছর তাঁদের ৪৪ টন ধান বীজ বিক্রি করা হয়েছে। কৃষকরা চলমান সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি কোম্পানীকে জানানোর পর সরেজমিনে পর্যবেক্ষন টিম পাঠিয়েছে। ভাইরাস বা আবহাওয়াজনিত কারণে এমনটি হতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।
ভাদুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুহিন চন্দ্র অধিকারী বলেন, এবার হীরা ধান চাষ করায় গাছগুলো খর্বাকৃতি, কুশির সংখ্যা স্বলতা ও বাদামী বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, বীজে ভেজাল থাকার কারণে এমনটি হতে পারে। বিষয়টি উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।