নিজস্ব প্রতিবেদক:
তৃণমূল সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরুপ ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এ লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা প্রাপ্ত সাংবাদিক হোসাইন আহমদ হেলাল তার অনূভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, জীবনব্যাপী সমাজ অঞ্চল ও রাষ্ট্রের প্রতি দায় বোধের যে আত্মনিবেদন তার উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতিহীন বিদায়ও কম নয়। সেই নিরীক্ষে এমন সম্মাননা নিজের পেশাগত দায়, সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের দায়কে আরো বাড়িয়ে দেয়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও অভিভূত যে প্রান্তিক জনপদের একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমি মনে করছি এ প্রথম যারা জাতীয় ও তৃণমূল সাংবাদিকতায় পুরো দেশ নিয়ে ভেবেছে তাদের স্বীকৃতি মিলেছে। এমন স্বীকৃতি ও সম্মাননা নিজেকে কেবল বিমুগ্ধ করেনি, করেছে বিনীত কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠি বসুন্ধরার এ সম্মাননা তৃণমূল সাংবাদিকদের আরো সাহস ও প্রেরণা যোগাবে বলে মনে করছি।
তিনি আরো বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত বসুন্ধরা গ্রুপ উন্নত সম্বৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে সারাদেশের সকল সাংবাদিকদেরও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছেন বলে মনে করছি।
আমার প্রাপ্ত সম্মাননা মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের পিছিয়ে পড়া বঞ্চিত, অবহেলিত ও শোষণ বঞ্চনার শিকার মানুষদের উৎসর্গ করছি।
ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় সোমবার (৩০ মে সন্ধ্যা ৭টায়) আয়োজিত ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ এর অনুষ্ঠান শেষে এমন অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন প্রবীণ এ সাংবাদিক।
সম্মাননা প্রাপ্ত সাংবাদিক হোসাইন আহমদ হেলালের বর্ণাঢ্য জীবনের নানা কর্মকা- :
জন্ম :
১৯৬৪ সালের ২১ জুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর টুমচর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জম্ম গ্রহণ করেন হোসাইন আহমদ হেলাল। তার পিতা ডা. আহসান উল্লাহ ও মা অহীদা খাতুন। সাত ভাই বোনের মধ্যে চার নাম্বার তিনি।
শিক্ষা জীবন:
১৯৮১ সালে লক্ষ্মীপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।
কর্ম জীবন :
বাবার ইচ্ছে ছিল বাবার মত ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবেন। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোক ছিল তার। অদম্য সাহস ও দৃড় মনোবল তাকে সফল করে তুলেছেন। এখন তৃনমূল সাংবাদিকতার আদর্শ হয়ে উঠেছেন এ কলম যোদ্ধা। ১৯৮১ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন তখনকার স্থানীয় পত্রিকা সাপ্তাহিক নতুন সমাজ ও সাময়িক বার্তায়। ছড়া, কবিতা, গল্পের পাশাপাশি সংবাদ লেখা শুরু করেন। উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর যোগ দেন জাতীয় দৈনিক দেশ পত্রিকায়। পড়াশুনার পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ তৈরির কাজ চালাতেন নিয়মিত। ১৯৮৮ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে দৈনিক জনতায় কাজ করেন। ১৯৯১ সালে নিজ এলাকা থেকে সাপ্তাহিক নতুন পথ প্রকাশ করেন। দৈনিক ইনকিলাব এর জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও নিয়োগ পান। ১৯৯৫ সালে জনকণ্ঠে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের দুর্গম চরাঞ্চল নিয়ে শুরু হয় তার বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখি। চর গজারিয়া, বয়ার চর, তেলির চর নিয়ে তার লিখা সিরিজ আকারে প্রকাশ করে জনকণ্ঠ। ‘চরের মানুষ, চরের জীবন’ শিরোনামের এই সিরিজ ব্যপক আলোচনায় আসে। ১৯৯৯ সালে জনকণ্ঠ ছেড়ে আবারো যোগদান করেন ইনকিলাবে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে অনেক ঝড় ঝাপ্টা সামলাতে হয়েছিলো তাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরাঞ্চলের লাঠিয়াল বাহিনী এবং লক্ষ্মীপুর- ভোলা সীমানা বিরোধ নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে পরিচয় গোপন রেখে কখনো কখনো ছদ্মবেশ ধারণ করে সংবাদ সংগ্রহ করতেন। তার লেখালেখির কারনে ওইসব অঞ্চল এখন দখল মুক্ত ও শান্তিতে বসবাস করছে মানুষ। তার সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনীর কারণে ২০০৮ সালে দৈনিক ইনকিলাব তাকে স্টাফ রিপোর্টার, ২০১২ সালে দৈনিক ইনকিলাব এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার পদন্নোতি দিয়ে ঢাকা অফিসে নিয়ে যায় দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে বিশেষ সংবাদদাতায় পদন্নোতি পান তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় কাজ করেছেন তিনি। এরপর তিনি ফিরে আসেন নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে। এছাড়াও তিনি চ্যানেল ওয়ান, বাংলাভিশন, একুশে টিভি, এশিয়ান টিভি, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক দিনকালে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে ৪ কালার ৮ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত দৈনিক নতুনচাঁদ পত্রিকার সম্পাদনা করছেন এবং জাতীয় ইংরেজি পত্রিকা ঢাকা ট্রিবিউন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
কারা বরণ ও মামলায় জড়ানো :
১৯৯৮ সালে ‘লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাসের জনপদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে কারাবরণ করতে হয়েছিল তাকে। এছাড়াও একটি রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজির মামলায় ১৭ দিন নোয়াখালীতে কারাবন্ধী ছিলেন। প্রায় ৩ বছর আত্মগোপনে থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লেখালেখি চালিয়েছেন। পার্শবর্তী জেলা নোয়াখালী, চাদপুর, ফেনীতে থেকেও থেমে থাকেননি তিনি। এই ৩ বছরে রাজনৈতিক নেতারা ১৭টি মামলা রজু করেন তার বিরুদ্ধে। সরকার পরিবর্তন হলে রামগঞ্জে রাজনৈতিক হত্যাকা-কে কেন্দ্র করে লেখালিখি করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা থেমে থাকেননি এ কলম যোদ্ধা। এনিয়ে আরো দুটি মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয় তাকে। ১/১১ এর সময়কার সেনাবাহিনী সরকার আমলে সংবাদ ছাপানোকে কেন্দ্রকরে বিশেষ ধারায় মামলা করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ৬ মাস ১৪ দিন কারাবরণের পর হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পায়।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃত্ব :
বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও সাহসী লেখনীতে এ পর্যন্ত ৫ বার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এখনো সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এছাড়া ১৯৯৮ সালে এনজিও এর মাধ্যমে ম্যাসলাইন মিডিয়া সেন্টার এর সমন্বয়কারি হিসেবে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় শতাধিক প্রশিক্ষণ ও জেলার সংবাদকর্মী এবং স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের নিয়ে ৫০টি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন তিনি। এছাড়া তিনি জেলার বহু সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং একটি এতিমখানা পরিচালনা করছেন।
লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক বলেন, মফস্বল সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ পেয়েছেন লক্ষ্মীপুরে কৃতিসন্তান সাংবাদিক হোসাইন আহমদ হেলাল। তিনি লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের পাঁচ বারের নির্বাচিত সভাপতি ও তিন বারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। বর্তমানেও তিনি লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা উন্নয়ন বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিবেরও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি তার বাবা ডা. আহসান উল্ল্যাহর প্রতিষ্ঠিত একটি এতিমখানা পরিচালনা করছেন। সাংবাদিকতায় তিনি বর্তমানে দৈনিক নতুনচাঁদ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন। গুণীজন হিসেবে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমদ হেলালকে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম পাবেল বলেন, গুণী সাংবাদিক হোসাইন আহমদ হেলাল তার চল্লিশ বছরের সাংবাদিকতা পেশায় বসুন্ধরা মিডিয়া তাকে সম্মানিত করেছেন। আমরা চাই বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ অন্যরাও অনুসরণ করুক। মফস্বলের সাংবাদিকদের মূল্যায়ন হোক।
তৃণমূলের গুণী সাংবাদিক লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমদ হেলাল বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা অসাধারণ কাজ করেছে। অনেক সম্মননা পেয়েছি কিন্তু এটা ছিল ব্যতিক্রমী। এটা আমার জীবনের শেষপ্রান্তে সেরা প্রাপ্তি। পরবর্তী প্রজন্ম সাংবাদিকতা পেশায় উৎসাহিত হবে বসুন্ধরা গ্রুপের এ উদ্যোগে। মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের অনেক বড় ভূমিকা গণমাধ্যমে রয়েছে। তাই মফস্বলে কাজ করা সাংবাদিকদের সুখ-দুঃখে খবর রাখার অনুরোধ করেন হোসাইন আহমদ হেলাল।
তিনি আরও বলেন, আমি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দেখেছি। পুরষ্কার সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ কাজে উৎসাহ প্রদান করবে। ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহ যোগায়।